Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের মাধ্যমিক স্কুলে নির্বাচনি পরীক্ষার আগেই দু’চিঠি : বিপাকে প্রধানরা
Two letter in chandpur high school

চাঁদপুরের মাধ্যমিক স্কুলে নির্বাচনি পরীক্ষার আগেই দু’চিঠি : বিপাকে প্রধানরা

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্ষপুঞ্জি মতে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে নির্বাচনি পরীক্ষা বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকেল দেড়টা থেকে শুরু হচ্ছে। পরীক্ষার আগেই দু’চিঠি নিয়ে বিপাকে রয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

একটি হলো আদালতে নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত পরীক্ষার ফি আদায় ও নির্বাচনি পরীক্ষার স্বচ্ছ ফলাফল প্রেরণ প্রসঙ্গ, অপরটি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দুদক কর্তৃক প্রেরিত শিক্ষার্থীদের থেকে আদায়কৃত নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকলে তার বিবরণ জমা দেয়া প্রসঙ্গ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লার সম্প্রতি প্রেরিত চিঠি মতে, ২০১৭ সালের আসন্ন নির্বাচনি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কেবলমাত্র অংশগ্রহণ করতে পারবে ।

বোর্ডে চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ফরম পূরণের পূর্বেই সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা বোর্ডে প্রেরণ করতে হবে। এরইমধ্যেই পরীক্ষার ফি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্ধারণ করে দিয়েছে। যা হলো ১ হাজার ৫ শ’৫০ টাকা।

কোনো মতেই অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে অনুত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীরা আসন্ন এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমারের কাছে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। নির্বাচনি পরীক্ষার পর বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে। তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরই ফরম ফি বিভাগ অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেন। উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণ তালিকা এ বছরই চেয়েছে। আমরা পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কোনো সমাধান দেননি।’

সমাধানের বিষয়ে জানাতে চাইলে সরকারি বিদ্যালয়ের এ প্রধান শিক্ষক জানান, ‘নির্বাচনি পরীক্ষা সাধারণত অভ্যন্তরীণ ও তুলনামূলক কঠিন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে নেয়া হয়। এতে নিম্নমেধাবী শিক্ষার্থীরা হয়তো দু’এক বিষয়ে অনুর্ত্তীর্ণ হয়ে থাকেন। বিশেষ বিবেচনায় অভিভাবকদের সাথে কথা বলে এসব শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হয়। পরবর্তীতে পাবলিক পরীক্ষায় সাধারণত সহজ প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ায় এসব শিক্ষার্থীরা উর্ত্তীণ হয়ে আসতে দেখিছি। দুঃখজনক হলেও সত্য মাঠ পর্যায়ে আমরা কাজ করি, বোর্ড কর্তৃপক্ষ কখনো এ বিষয়ে আমাদের কাছে পরামর্শ চাননি।’

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি চিঠি চাঁদপুরও জেলা প্রশাসক জেলার মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে স্ব-স্ব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রেরণের জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই চিঠিতে ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও উচ্চতর শ্রেণিতে প্রমোশন পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা, নির্ধারিত ফি এর বেশি অর্থ আদায়ের সুযোগ গ্রহণ করে থাকলে তার বিবরণী নিজ উপজেলা শিক্ষা অফিসে ১৫ অক্টোবরের ভেতর প্রেরণের জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধানে জানা গেছে, একাধিক বেসরকারি স্কুলের প্রধানগণ শিক্ষক কাউন্সিলের সভায় ওই দুই চিঠির বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনা করেছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের প্রতি ফলাফলের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে সরকারি প্রািতষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশরাই ম্যানেজিং কমিটির প্রভাবে নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও নির্বাচনি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে বিশেষ অংকের অর্থ নিয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, অনেক ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যদের চাপে পড়েই তারা এ কাজটি করে থাকেন। এখন অধিদপ্তর ও দুদক থেকে পাঠানো চিঠি নিয়ে তারা কিছুটা বিপাকে রয়েছেন।

চিঠি সম্পর্কে মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, চিঠিটি আমরা পেয়েছি, নিয়ম অনুযায়ী আমরা পাঠিয়ে দিবো। তবে আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, আমরা সরকারি স্কুলগুলো কখনোই কোনো বার্ষিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রমোশন দেই না । অভিভাবকদের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে প্রমোশন দিয়ে থাকি।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে এ বিষয়ে কথা হয় বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো.মোশারফ হোসেনের সাথে।

তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘বোর্ড যেভাবে চাইছে আমরা সেভাবেই পাঠাবো। তবে নির্বাচনি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বোর্ড কি সিদ্ধান্ত নেয় তা আমরা জানি না। আমি এক্ষেত্রে বলবো, একজন শিক্ষার্থী দুর্ঘটনাক্রমে এক কিংবা দু’বিষয়ে অকৃতকার্য হতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যদি ২০ নম্বরের উপরে পায় এবং সেটা যদি দু’বিষয়ে বেশি না হয় তাহলে তাকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। কারণ আমার বিশ্বাস ওই শিক্ষার্থী নির্বাচনি পরীক্ষার পর যে সময়টুকো পায় ওই সময়ে পড়াশোনা করলে এবং অভিভাবক সচেতন থাকলে ওই শিক্ষার্থী কৃতকার্য হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’

এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, শিক্ষা অধিদপ্তর সাধারণত রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাঁদের জানা উচিত মফস্বল আর শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একই পদ্ধতিতে চালানো সম্ভব নয়।’

প্রসঙ্গত, প্রতিদিন এক বিষয় করে আগামি ১১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে যা শেষ হবে ৩০ অক্টোবর। জেলার ৮ উপজেলায় ২ শ’ ৯৩ টি মাধ্যমিক স্কুলে প্রায় ১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এবারের নির্বাচনি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলে এক সূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৯:১৩ পিএম, ০৯ অক্টোবর, ২০১৭ সোমবার
ডিএইচ

Leave a Reply