প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা হলো সকল শিক্ষার ভিত্তি। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের আশীর্বাদ আজ এ স্তরেও লেগেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চলছে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান। সারাদেশে তৈরি হয়েছে ৭ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। কাজটি চলমান এবং আশা করা যায় শীঘ্রই প্রায় সকল বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এ ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়ার আওতায় আসবে।
অতীতে পাঠদান ছিল পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষকের মেধানির্ভর। ফলে বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠেও তেমন কোনো প্রযুক্তিগত উত্কর্ষ দেখানো সম্ভব ছিল না। বর্তমানে এ ধারণা অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন সকল বিষয় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে তৈরিকৃত কনটেন্ট দ্বারা পাঠদান করা হয়। এক সময় শিক্ষকরা উপকরণ হিসেবে চার্ট,মডেল, ছবি,পাঠ্যবই,পোস্ট কার্ড,স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত বা তৈরিকৃত নানা উপকরণ এবং স্বল্পমূল্যের কিছু উপকরণ ব্যবহার করে পাঠকে আকর্ষণীয় ও বোধগম্য করার চেষ্টা করতো।
বর্তমানে সরকার তথ্য প্রযুক্তিতে অধিক গুরুত্ব আরোপ করার ফলে শুরু হয়েছে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার। এখন পাঠভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করে তা’শ্রেণিতে উপস্থাপন করা হয়। ফলে অধিক মাত্রায় শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে।
মাল্টিমিডিয়া হলো একটি সমন্বিত বিষয়। এতে ব্যবহার করা হয় কম্পিউটার,ইন্টারনেট,প্রজেক্টর,অডিও-ভিডিও,স্ক্রীন ইত্যাদি। এতে কনটেন্ট তৈরি,সংরক্ষণ এবং পরবর্তীতে উপস্থাপন কিংবা সম্পাদনা করার সুযোগ আছে। প্রয়োজনে তথ্য মুছে দিয়ে নতুন তথ্য যোগ করা যায়। মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টে এ্যানিমেশন ব্যবহার করে প্রজেক্টরের সাহায্যে পাঠ উপস্থাপনের কাজ করা যায়।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়ার জন্যে শিক্ষকদের ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে কিছু দক্ষ শিক্ষক। তারা তাদের বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষককে হাতেকলমে শিখিয়ে যোগ্য ও দক্ষ করছে। ফলে বর্তমানে প্রায় সকল শিক্ষক ডিজিটালের সংস্পর্শে এসেছে। নিজেদের মধ্যে বেড়েছে ডিজিটাল প্রতিযোগিতা। কার পাঠ কতটা তথ্য নির্ভর,আকর্ষণীয় এবং বোধগম্য তার জন্যে মেধা মনন খাটিয়ে তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্ট। পাঠের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানা ভিডিও ক্লিপস ও ছবি এবং সঙ্গে থাকে এ্যানিমেশনের খেলা।
মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান করায় শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। পাঠটি বোধগম্য ও চিত্তাকর্ষক হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাও এ সরঞ্জামাদি ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি স্লাইডের পরে অন্য স্লাইড দেখার কৌতূহলী ভাব বেড়েছে। অসংখ্য ছবি বা উদাহরণ দিয়ে দুর্বোধ্য পাঠকে সহজবোধ্য করা হচ্ছে। ছবি,অডিও-ভিডিও যেন বলে দিচ্ছে পাঠে কী আছে। শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামাদির নাম জানতে পারছে এবং নিজেও কনটেন্ট তৈরিতে অংশ নিয়ে হাতেকলমে শিখছে। এ অসাধারণ সুযোগ করে দিয়েছে মাল্টিমিডিয়া।
অধিক তথ্য থাকায় যেকোনো সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়া ভীতি দূর হয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বকে শিক্ষার্থীর সামনে হাজির করা যায়। যেমন-কোনো শিক্ষার্থী বলল,আমি কালো ঘোড়া দেখেছি। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এধরনের ঘোড়া না দেখায় তাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাচ্ছে।
শিক্ষক মুহূর্তে গুগলে সার্চ দিয়ে কালো ঘোড়ার ছবি ও ভিডিও বের করে শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দিলেন। বিশ্বের কোথাও না কোথাও কালো ঘোড়া আছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণ হয়ে গেল যে,সে সত্যিই কালো ঘোড়া দেখেছে এবং কালো ঘোড়া আছে।
অনেক সময় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এ সকল মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামাদির কাছে যেতে বারণ করেন। বিদ্যুতের ভয় দেখান কিংবা দামি যন্ত্রপাতি নষ্টের আশঙ্কায় তাদেরকে দূরে থাকতে বলেন। এতে শিক্ষার্থীদের ভয় বেড়ে গিয়ে মাল্টিমিডিয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে।
যেহেতু গ্রামাঞ্চলে সকল বাড়িতে কম্পিউটার নেই তাই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দ্বারা হাতেকলমে পাঠ তৈরি,উপস্থাপন এবং মূল্যায়নে কাজে লাগিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহলী ইচ্ছাকে নিবৃত্ত করতে পারেন।
আশা করা যায়,সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন সকলের বাড়িতে কম্পিউটার এসে যাবে এবং সবাই একাজে দক্ষ হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
লেখক : মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ,৭ অক্টোবর,উপজেলা নির্বাহী অফিসার,জগন্নাথপুর,সুনামগঞ্জ
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৮:১০ পিএম,৭ অক্টোবর ২০১৭,শনিবার
এজি