আমরা অনেক সময় সিনেমা বা নাটকে দেখি বৃদ্ধ বয়সে ছেলে-মেয়ের কাছে বোঝা হয়ে যান মা-বাবা। তখন তাদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে অথবা বস্তিতে। আবার ছবির শেষ দৃশ্যে বাবা-মার সঙ্গে ছেলে-মেয়ের মিলও দেখা যায়। কিন্তু এই ঘটনা বোধে হয় সিনেমা বা নাটকের কাহিনীকে হার মানিয়েছে।
যে মায়ের তিন ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা, মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা অথচ তাদের সেই গর্ভধারিণী বৃদ্ধ মা মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছে!
শুধু তাই নয়, বর্তমানে তিনি এতোটাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন যে, সারাদিনে এক বেলা ভাতও জুটছে না তার ভাগ্যে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে। ওই বৃদ্ধ মায়ের নাম মনোয়ারা বেগমের (৭০)। তিনি ওই গ্রামেরর মৃত আইয়ুব আলী সরদারের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আইয়ুব আলী কৃষক পরিবারের সন্তান হলেও শত অভাবের মাঝেও সংসারে ৬ সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কেটেছে তাদের। আইয়ুব আলী-মনোয়ারা দম্পতির ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিন ছেলে- ফারুক হোসেন, নেছার এবং জসীম উদ্দিন পুলিশে কর্মরত আছেন।
অন্য দুই ছেলে শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং গিয়াস উদ্দিন নিজের ব্যবহৃত ইজি বাইক ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। অথচ তাদের গর্ভধারিণী মাকে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।
জীবন সায়াহ্নে এসে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম বয়সের ভারে এতটাই ন্যুজ যে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পর্যন্ত পারেন না। শুধু কি তাই, গত ৪-৫ মাস আগে ভিক্ষা করতে গিয়ে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙ্গে যায়। সেই থেকে আজ অবধি বাবুগঞ্জের স্টিল ব্রিজের পাশে একটি খুঁপরী ঘরে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছেন। ওই বৃদ্ধা শুয়ে শুয়ে ভাবে কখন মৃত্যু এসে তাকে আলিঙ্গন করবে।
মনোয়ারা বেগমের ছেলে ইজি বাইক চালক গিয়াস উদ্দিন জানান, আমি আমার সাধ্য মত মাকে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টার করছি। এখন আমিও সহায় সম্বলহীন, তাই বৃদ্ধ মা আজ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু পথযাত্রী। আমার তিন ভাই পুলিশ অফিসার এবং এক ভাই ব্যবসা করে। তারা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকে। কিন্তু বৃদ্ধ মায়ের কোনো খোঁজ নেয় না।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৯ : ৫০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সোমবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur