আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুরে হাসান উদ্দীন সরকার ও খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মেয়র পদে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিএনপি। বর্তমানে এই দুই সিটিতে দলটির সমর্থিত মেয়র থাকলেও তাদের এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। বরং দুই নতুন মুখেই ভরসা রাখলো বিএনপি।
হাসান উদ্দীন সরকার বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগরের সভাপতির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মনোনীত দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা বৈঠক করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যে মনোনয়ন দিয়েছি, আশা করি জনগণের সমর্থণ অতীতের মতোই পাবো। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দুই সিটিতে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা করি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন। যার জন্য বিএনপি থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। আমি আবারও বলছি, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকে, এটা আমাদের প্রত্যাশা।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন। প্রায় আড়াই ঘন্ট্যাব্যাপী এ বৈঠক থেকে গাজীপুরে মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান মেয়র ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। পরে আবদুল মান্নানকে নিয়ে রাত পৌনে ৯ টায় গুলশান অফিসের নিচের রুমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস এবং নজরুল ইসলাম খান রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন।
মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. মঈন খান, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত রবিবার গুলশানে দুই সিটির বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পৃথক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। দুই সিটি থেকে মোট ১০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও ওই সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন ৯ জন। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে দুজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিলো বিএনপি।
বিএনপি সুত্রে জানা যায়, গাজীপুরে আব্দুল মান্নানকে রবিবার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে দলের হাইকমান্ড গতকাল হাসান সরকারকে প্রার্থী করার পক্ষে মত দেন। আব্দুল মান্নান অসুস্থ থাকায় এবং আওয়ামীলীগ গাজীপুরে নতুন প্রার্থী দেয়ায় বিএনপির প্রার্থী বদলানো হলো।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাসান সরকার ইত্তেফাককে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমার ওপর আস্থা রাখায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বর্তমান মেয়র এমএ মান্নানসহ সর্বোপরি দলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।
খুলনা সিটিতে মনোনয়ন পাওয়া নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। ধানের শীষের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে খুলনা সিটিতে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন, বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটির বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান, দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, মেয়র মান্নানের ছেলে এম মনজুরুল করীম, গাজীপুর জেলা বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার, আবদুস সালাম ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরাফত হোসেন।
এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে রবিবার রাতে মেয়র পদে দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী, মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১২ এপ্রিল; যাচাই-বাছাই ১৫-১৬ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এখানে ভোটার ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। খুলনা সিটি করপোরেশন গঠিত ৩১টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ । আগামী ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।
-ইত্তেফাক