Home / শীর্ষ সংবাদ / চাঁদপুর সরকারি কলেজে ফরম ফিলাপ বঞ্চিতদের ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ
চাঁদপুর সরকারি কলেজে ফরম ফিলাপ বঞ্চিতদের ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ

চাঁদপুর সরকারি কলেজে ফরম ফিলাপ বঞ্চিতদের ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ

চাঁদপুর সরকারি কলেজ (চাঁসক) ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে না দেয়ায় কলেজ ভাংচুর, প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ এবং সড়কে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে দুটি প্রতিষ্ঠানের ৩শ’ ৫৫ শিক্ষার্থী একভেবেই বিক্ষোভ করে।

চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য ২শ’ ৪১ শিক্ষার্থী কলেজের সবগুলো ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

এসময় কলেজের ভেতরে আটক পড়েন এইচএসসি প্রথম বর্ষ ও অনার্স (সম্মান) প্রায় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী।

এসময় আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংঙ্ক দেখা দেয়। পরে খবর পেয়ে প্রায় ১ঘণ্টা পর চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ এসে তালা ভেঙে আটকে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধার করে।

এদিকে চাঁদপুর সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের চিত্র ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কে অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

এতে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং আশপাশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আফজাল হোসেন ও সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে মডেল থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থী প্রিয়াংকা ও ফারজানা, মিতু, শ্যামলি, নুসরাতসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের অধিকাংশ এক ও দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ হিসাব বিজ্ঞান ও আইসিটিতে মাত্র ১ নাম্বারের জন্য অকৃতকার্য হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি কলেজে আইসিটি ও হিসাব বিজ্ঞানে শিক্ষক নেই। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠ না পাওয়ায় তারা অকৃতকার্য হয়েছেন। কিন্তু তারা অন্যান্য সব বিষয়ে ভালো ফলাফল করেছেন।

গত এক মাস ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন তাদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক অনেক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের চেয়ে কম নাম্বার পাওয়া এবং একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া বহু শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপ করা হয়েছে। রেজাল সিটে তাদের ফলাফল এডিট করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর এসব করা হয়েছে টাকা আর মুখ দেখে দেখে।

শিক্ষার্থীরা ক্ষোভের সাথে জানায়, কতৃপক্ষ একই কলেজে দুই নীতি কিভাবে দেখাচ্ছে। আমরা শিক্ষকদের পায়ে ধরে বলেছি যে অন্তত্য শেষ বারের মতো আমাদের একটু সুযোগ করে দেন। কিন্তুু তারা একমাস ধরে আমাদের শুধু আশ্বাস দিয়ে আজ শেষ দিনে না করে দিয়েছে।
এ কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক দিলিপ ঘোষ, চন্দ্রন কুমার, আঞ্জুমা বেগম, ডা. রতন ও শাহানারা বেগমসহ অনেকে জানান, প্রায় এক মাস ধরে কলেজের অধ্যক্ষ তাদের বলেছেন এক বিষয়ে অকৃতকার্যদের ফরম ফিলাপ করার জন্য তিনি বোর্ডে যোগাযোগ করছেন। সবশেষ তিনি তাদের আজকে (৮ জানুয়ারি) কলেজে আসার জন্য বলেছেন।

আজকে যখন অনেক আশা নিয়ে সকল শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা কলেজে এলো তখন অধ্যক্ষ স্যার কলেজেই আসেননি। এখন অধ্যক্ষ স্যারের অনুপস্থিতিতে অন্য শিক্ষকরা জানিয়েছেন অকৃতকার্যদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আমরা কি করবো।

নাম প্রকাশ করতে অনিশ্চুক অনেক অভিভাবক কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ আরো আগে এ কথা বললে আমরা পূণরায় পরীক্ষা নেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ করতাম।

কারণ অকৃতকার্য হওয়া অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ আমাদের মেয়েদের একটি বছর পিছিয়ে দেয়নি তিনি দায়িত্বহীন কাজ করে অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছেন। কারণ এবছর অকৃতকার্য হওয়ার শিক্ষার্থীরা আগামী বছর জিপিএ-৫ পেলেও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় কিংবা ভালো কোনো কলেজে চান্স পাবে না।

এ বিষয়ে সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মো. মাসুদ হোসেন জানান, আমরা বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী অভিভাবকদের জানিয়েছি অকৃতকার্যদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগই নেই। এখানে মাত্র অল্প ক’জন শিক্ষার্থী কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালার বাইরে আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে পারব না।কারণ গত ২০ ডিসেম্বর আমরা ফলাফল বোর্ডে পাঠিয়ে দিয়েছি।

আইসিটি ও হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো কলেজে আইসিটির শিক্ষক নেই আর অন্য বিভাগের শিক্ষক সংঙ্কট রয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে কলেজ অধ্যক্ষের মোবাইল ফোন বন্ধ পওয়ায় যায়।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় মোট ৮শ’ ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে অকৃতকার্য হয় ৫শ’ ৮৯ জন। আর ১ ও দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হয় ১শ’ ১৪জন।

এদিকে দুপুর তিনটায় চাঁদপুর সরকারি কলেজে সূত্র জানা যায় এই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩ বিভাগের সর্বমোট ৪শ’ ১২জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এতে কৃতকার্য হয় ২শ’ ৯৮ জন আর অকৃতকার্য হয় ১শ’ ১৪ জন।

এর মধ্যে ১ বিষয়ে অকৃতকার্য হয় ৫৪ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১শ’ ৫২ জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য ১শ’ ৩১ জন ও অকৃতকার্য হয় ২১ জন।

ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১শ’ ৯ জন পরিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য ৭৬ জন ও অকৃতকার্য হয় ৩৩ জন।

মানবিক থেকে ১শ’ ৫১ জন পরিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য ৯১ জন ও অকৃতকার্য হয় ৬০ জন।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন জানান, আমরা বোর্ডের নীতিমালার বাইরে কোনো কাজ করতে পারিনা। বোর্ডের নির্দেশনার আলোকে অকৃতকার্যদের বাদ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কলেজের বাইরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না। কলেজের অভ্যন্তরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০ : ৪৫ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার
এইউ