অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবী মূর্তি অপসারণ করা না হলে লাখ লাখ মানুষ নিয়ে ঢাকা ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
তারা বলেছেন, ‘প্রয়োজনে আবারো শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি দেয়া হবে। অতীতে শাপলা চত্বরের অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমরা হেফাজত আমিরের নির্দেশে চলে এসেছি। কিন্তু ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ যদি সরকার কঠোর হাতে দমন না করে এবং অবিলম্বে গ্রিক মূর্তি অপসারণ করা না হয় তাহলে আবারো শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি দেয়া হবে। এবার আর শাপলা চত্বর থেকে তৌহিদী জনতা ফিরে আসবে না যতক্ষণ সরকারের পতন না হবে।’
শুক্রবার (১০ মার্চ) জুমার নামাজ শেষে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা এ হুঁশিয়ারি দেন।সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদ, অপসারণ ও হেফাজতে ইসলাম নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহরের দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার বিপরীত। কোনো মুসলমান মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক বিশ্বাস করলে তার ঈমান থাকবে না। বাংলাদেশে মূর্তি স্থাপনের চাহিদা ও সুযোগ কোনোটাই নেই। অবিলম্বে এই মূর্তি অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় ঈমান, আক্বীদা ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে মূর্তি অপসারণের দাবিতে প্রয়োজনে লাখ লাখ মানুষ নিয়ে ঢাকা ঘেরাওসহ শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ তারা বলেন, ‘অবিলম্বে এই গ্রিক মূর্তি অপসারণ করা না হলে সরকারের পতন অনিবার্য।’
বক্তারা বলেন, ‘মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরী বানানো হচ্ছে কার স্বার্থে? দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাস্কর্যের নামে মূর্তি তৈরির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যারা মূর্তির পক্ষে কথা বলছেন তারা জনবিচ্ছিন্ন। এরা নাস্তিকদের দালাল। মূর্তি ও অপসংস্কৃতি চর্চা থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে মূর্তি সংস্কৃতি কেন? মূর্তি ও অপসংস্কৃৃতি দুটিই ইসলামবিরোধী। মূর্তি ও অপসংস্কৃতিকে বৈধ মনে করলে মুসলমানিত্ব থাকবে না। ইসলাম এসেছে মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে।’
দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত অর্থসম্পাদক মাওলানা হাজী মোজাম্মেল হক। বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা ক্বারী মুবিনুল হক, মাওলানা আ.ন.ম আহমদুল্লাহ, মাওলানা জয়নুল আবেদীন কুতুবী, মাওলানা মনছুর আলম, মাওলানা শেখ আবু তাহের, মাওলানা জুনাইদ জওহর, মাওলানা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা মুহাম্মদ হানিফ,মাওলানা তকি ওসমানী, মাওলানা কুতুব উদ্দিন, মাওলানা সায়েম উল্লাহ, মাওলানা হাবিবুর রহমান হাকীম, মাওলানা জুনায়েদ বিন ইয়াহইয়া, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ,মাওলানা নাজমুস সাকিব, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা ফয়জুর রহমান ফয়েজ,মাওলানা মাহামুদুল হাসান খাকি, মাওলানা নাঈম উদ্দিন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘মহানবী (স.)বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আইন প্রণেতা হিসেবে স্বীকৃত। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের সামনের ফটকে সর্বশ্রেষ্ঠ আইনপ্রণেতা হিসেবে ফলকে রাসূল (স.) এর নাম রয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও বিচারের প্রতীক হিসেবে কোনো মূর্তির অবস্থান নেই। কোনো মুসলিম দেশেও এরকম নজির নেই। তাহলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সামনে কেন মূর্তি থাকবে। সুতরাং সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি অপসারণ করতেই হবে। অন্যথায় জান-মাল দিয়ে হলেও ঈমান রক্ষায় ইসলামী জনতা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবে, যা সরকারের জন্য শুভ হবে না।’
এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক ইসলামবিরোধী আইন হচ্ছে উল্লেখ করে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী পাঠ যোগ করা হয়েছে, সংবিধান থেকে ইসলামের মৌলিক বিধান তুলে দেয়া হয়েছে, নারী নীতিমালার নামে মা-বোনদেরকে বেহায়াপনার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সরকারের এসব নীতির বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। এবার গ্রিক মূর্তি অপসারণের দাবিতে হেফাজতের কর্মসূচি চলছে। মূর্তি অপসারণের চলমান এই আন্দোলন বানচাল করতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় হেফাজত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অবিলম্বে এ সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’(প্রাইমনিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৩০,এ.এম ১১ মার্চ ২০১৭,শনিবার
ইব্রাহীম জুয়েল