রাজনীতি

৯ দফা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সেই দুই পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তাদের দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়। তারা (শিক্ষার্থীরা) ৯ দফা দাবি তুলেছে। তাদের দাবি যৌক্তিক। তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। দু-একটি দাবি পূরণ করতে সময় লাগবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ধানমণ্ডিতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, ফুট ওভার ব্রিজ করার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করা হয়েছে—উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবার তাদের রাস্তা ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু করণীয় থাকবে না। কারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণের শিকার হয়েও চুপচাপ রয়েছে।

আসাদুজ্জামান খান আরো বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি রোডে চলতে পারবে না। যেখান থেকে গাড়ি স্টার্ট হয় সেখানে চেকপোস্ট বসিয়ে দেব। আমরা দেখছি সমস্ত স্কুল বন্ধ তার পরও কলেজের ছাত্ররা সমবেত হয়েছে। আমরা লক্ষ করছি, গত চার দিনে ৩১৭টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। আটটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, মিরপুরে পিওএমে ঢিল ছুড়েছে, কাফরুল থানায় আক্রমণ হয়েছে। চলন্ত গাড়ির ধাক্কা খেয়ে ফয়সাল ও রাব্বী নামে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। এসব ঘটনা একের পর এক ঘটে যাচ্ছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় বলছি তাদের দাবি যৌক্তিক। তাদের দাবি বাস্তবায়ন করব। আমি কলেজের গভর্নিং বডি, শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনুরোধ করছি, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন রাস্তায় এসে দেশের জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে। আমরা দেখেছি সমস্ত ঢাকা অচল হয়ে গিয়েছে। সমস্ত সার্ভিস বাসগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাদের ওপর হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় গাড়ি চালাচ্ছে না। জনগণের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ হয়েছে। তারা যেন বাসায় ফিরে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়। আমি শিক্ষকদের বলব, শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে অযথা কষ্ট করছে। তাদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর অনুরোধ করব। যেটা দেখছি আন্দোলনে সুবিধাবাদীরা স্বার্থান্বেষী মহল সম্পৃক্ত হয়ে যায়।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা ফেসবুকে ছাত্রশিবিরের ছবি দেখছি। ছাত্রদলের নেতাদের দেখছি। এগুলো কাম্য নয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্যাবোটাজ ঘটিয়ে দিতে পারে। ছাত্রদলের নেতারা স্কুল ড্রেস পরে আসার জন্য উৎসাহিত করছে। আন্দোলনকারীদের খাদ্যদ্রব্য দিয়ে উৎসাহিত করছে, আপনারা দেখেছেন। হয়তো আন্দোলন ভিন্ন দিকে টার্ন নিতে পারে। পুলিশের ওপর অহেতুক আক্রমণ হচ্ছে। চরম ধৈর্যের সঙ্গে পুলিশ তা দেখছে। তারা কিছু করছে না। আমি অনুরোধ করব তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। যাদের কাজ তাদের করতে দিন। একটি শিশুর গলায় হাত দেওয়া এএসআই পলাশের ২০১৩ সালের ছবি ফেসবুকে দেওয়া হয়েছে। এ অপরাধে অনেক আগেই পলাশের চাকরি চলে গেছে। তার ছবি দিয়ে উসকে দেওয়া হচ্ছে। রুয়ান্ডার গণহত্যার ছবি দেওয়া হচ্ছে ফেসবুকে। অশ্রাব্য উক্তি দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষভাবে অনুরোধ করব শিক্ষার্থীদের ফিরে যেতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন যদি কোনো ঘটনা ঘটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব নিতে পারবে না। তারা চুপচাপ বসে আছে।’

ছাত্ররা বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর পুলিশ কোনো ঝামেলা করবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেন করবে! ওরা তো ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে। এ ঘটনায় আমরা সবাই ব্যথিত।’

র‌্যাবের ডিজি বলেন, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ঢাকা শহর অচল করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে : র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ক্রমাগত ঢাকা শহরকে অচল করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গতকাল বিকেলে র‌্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশেষ করে গত দুই দিন ধরে স্কুলছাত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও একত্রিত হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুদের ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাত থেকে নিজেদের সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবক ও প্রাতিষ্ঠানিক অভিভাবকদের প্রতি তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তা থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান তিনি।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরপরই কিছু স্কুলছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে। আমরা প্রত্যেকের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারি। তাদের একজন বন্ধু কিংবা সহকর্মী মারা যাওয়ায় তাদের আবেগ কাজ করতেই পারে। সেটাও আমরা এপ্রিসিয়েট করছি। কিন্তু গত চার দিন ধরে ক্রমাগতভাবে ঢাকা শহরকে অচল করে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। বিশেষ করে গত দুই দিন ধরে স্কুলছাত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও একত্রিত হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুদের ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। আজও ৯টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। গত চার দিন ৩১৮টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে ধানমণ্ডিতে একজন সার্জেন্টকে ডেকে মারধর করা হয়েছে। সেগুনবাগিচায় সরকারি অফিসে হামলা হয়েছে। মিরপুরের কাফরুল থানায় হামলা করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই অবুঝ শিশু ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ তা সম্বল করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই পুরো বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে পরিচালনার চেষ্টা করছে। গত চার দিন ধরে ঢাকা শহরের জনগণ জিম্মি। পরিহনব্যবস্থা অচল। মানুষ কোথাও যেতে পারছে না। প্রেসার নিতে পারছে না।’

কালের কন্ঠ

Share