চাঁদপুরের এক তরুণীকে চকারির প্রলোভনে চট্রগ্রামে নিয়ে ৭ মাস ধরে আবদ্ধ রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেয়েটি অন্তঃসত্তা হওয়ায়, গর্ভ নষ্ট করার জন্য ভুল ঔষধ খাইয়ে দেয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মুমূর্ষু অবস্থায় শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগে তাকে ভর্তি করানো হয়।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, অভাবের সংসার, নাবালিকা থেকে সাবালিকা হওয়ার পর থেকেই বাবার সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন চাঁদপুর সদরের রেশমা (ছদ্মনাম)।
এর মধ্যে মুঠোফোনে পরিচয় হয় চাঁদপুর সদর উপজেলা শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মহামায়া গ্রামের হাসান খানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে।
মুমূর্ষু অবস্থায় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চাঁদপুর টাইমস প্রতিবেদককে রেশমা জানায়, ৭ মাস পূর্বে প্রতারক জাহাঙ্গীর তাকে চট্রগ্রামে বেশি টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরে নিয়ে আসে। খাবারের সাথে নেশা দ্রব্য মিশিয়ে এখানে এনে একটি আবাসিক হোটেলে রেখে তাকে ধর্ষণ করে এবং অনেকটা অচেতন অবস্থায় পরে চট্রগ্রাম নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে কোনো চাকরিতে না দিয়ে বরং তরুণীকে চট্রগ্রাম ঈদগাহ এলাকার ভাই ভাই নামে একটি আবাসিক হোটেলের বড় কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। রেশমার ব্যবহৃত মোবাইল সেট, সিম কার্ড, সাথে থাকে কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলে। এতে করে রেশমা তার বাড়িতে কোনো যোগাযোগ করতে না পারে অসহায় হয়ে পড়ে।
তরুণী পরের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হাসপাতালে নার্সদের সহযোগিতায় হাসপাতালে বেডে শয়ন অবস্থা থেকে উঠে বসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
রক্তাক্ত অবস্থায় লোমহর্ষক বিবরণ দিয়ে তরুণী রেশমা চাঁদপুর টাইমস প্রতিবেদককে জানায়, ‘আমি সেখান গিয়ে প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি। ওই আবাসিক হোটেলে আরো কিছু মেয়েকে আবদ্ধ দেখতে পাই। যাদের দিয়ে জোরপূর্বক নোংরা কাজ করানো হয়। পরবর্তীতে আমাকেও একাধিক পুরুষের সাথে নোংরা কাজে বাধ্য করা হয়। এতে রাজি না হলে জাহাঙ্গীর আমাকে না খাইয়ে রাখতো এবং খুব মারধর করতো। তার মারধরের ভয়ে নোংরা কাজে বাধ্য হতাম।’
তরুণী আরো জানায়, এভাবে নির্যাতিত হয়ে ২ মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে জাহাঙ্গীর তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য কোনো প্রকার চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো জোরপূর্বক ঔষধ খাইয়ে দেয়। এতে টানা ক’দিন তরুণীর প্রচ- রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অবস্থা বেঘতিক দেখে জাহাঙ্গীর চট্রগ্রাম থেকে সাগরিকা এক্সপ্রেসযোগে শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর কালীবাড়ি কোর্টস্টেশনে নিয়ে আসে।
চাঁদপুরে আসার পর রেশমা প্রচ- রক্তক্ষরণে অজ্ঞান হয়ে পড়লে, জাহাঙ্গীর তাকে প্ল্যাটফর্মের পাশে ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়।
তরুণীকে প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন সদরের বাকিলা মনিহার গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন বেগম নামে এক পথচারী।
সে চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘এক বৃদ্ধ লোক রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে হাতজোড় করে আমি একজন নারী হিসেবে আরেকজন নারীকে সাহায্য করতে অনুরোধ করেন। ওই বৃদ্ধ লোকের অনুরোধে আমি তাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসেও তার রক্তে হাসপাতালে ফ্লোর ও বিছানা রক্তাক্ত হয়ে যায়।’
এদিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই তরুণী এখন মৃত্যুশয্যায়। চিকিৎসক জানিয়েছে তার এ+ (পজেটিভ) ৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়েছ। সর্বশেষ খবরে ১ ব্যাগ রক্ত ব্যবস্থা করতে পেরেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিবুল আহসান চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘পথচারীরা ওই তরুণীকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রক্তশূন্যতা পূরণে অন্তত ৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন এর মধ্যে মাত্র ১ ব্যাগ আমরা দ্রুত ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছি।’
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫০ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur