দীর্ঘ সাত বছরের প্রেমের সফল পরিনতি হিসেবে অনেক বাধা বিপত্তি শেষে বাংলাদেশি ছেলেকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মালয়েশিয়ান কন্যা সিতি। মালয়েশিয়ার জহুর রাজ্যের লায়াং জেলার সেমপারেংগামের মেয়ে সিতিকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে বেজায় খুশি কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার মোহাম্মাদ ইয়াসিনও।
দীর্ঘ সাত বছরের প্রেমের সফল পরিণতি হল পরিনয়ের মাধ্যমে। রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় কনের বাবার বাড়িতে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সাত বছর আগে মালয়েশিয়ার এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সুবাধে সিতির সঙ্গে পরিচয় হয় ইয়াসিনের। পরিচয়ের পর দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। কিছুদিন পর ইয়াসিন ও সিতি সেই ফ্যাক্টরির কাজ ছেড়ে দেন। ইয়াসিন স্থানীয় বাজারে সবজির ব্যবসা শুরু করেন আর সিতি কাজ নেন অন্য জায়গায়। কিন্তু এতেও থেমে থাকে না তাদের মধ্যকার সম্পর্ক। বরং তা বাড়তে থাকে।
চার বছর পর ২০১৩ সালে তারা সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। নিয়ম অনুযায়ী ইয়াসিন কনের বাবার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু বেঁকে বসেন মেয়ের বাবা-মা। বিদেশি ছেলের কাছে কোনভাবেই মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশি ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া মালয় কন্যাও সাফ জানিয়ে দেন- বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে ইয়াসিনকেই করবেন, না হলে তিনি জীবনে বিয়েই করবেন না।
সিতির এমন আল্টিমেটামে বাধ্য হয়ে তার বাবা মা কথা বলতে চান পাত্রের দায়দায়িত্ব নিতে সক্ষম এমন একজন স্থানীয় গার্ডিয়ানের সঙ্গে। এবার বিপাকে পড়েন ইয়াসিন, প্রবাসে এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ গার্ডিয়ান কোথায় খুঁজে পাবো। প্রবাসে কে নিবে এমন দায়িত্ব। তাছাড়া, কে কি মনে করে সে ভয়ে কারো কাছে বলতেও পারেন না লাজুক ইয়াসিন।
এভাবে কেটে যায় আরো দুই বছর। পরে ২০১৫ সালের শুরুতে ইয়াসিনকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন জহুরবারুর বাংলাদেশ কমিউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জের তরিকুল ইসলাম আমিন । জহুর প্রদেশে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। যিনি নিজেও মালয়েশিয়ার জামাই।
ইয়াসিনের গার্ডিয়ান হয়ে তিনি যান সিতির বাবা-মায়ের কাছে। ইয়াসিনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে কথা বলেন তাদের সঙ্গে। এবার তারা বিয়েতে সম্মত হন। দীর্ঘ নয় মাসের চেষ্টার পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ইয়াসিন।
মালয়েশিয়ার রীতি অনুযায়ী পাত্রীকে হানতারান বা মোহরানার অর্থ পরিশোধ করতে হয় বিয়ের আগেই। ইয়াসিন মোহরানা বাবদ সিতিকে ১৫ হাজার রিঙ্গিত দিয়ে বিয়ের আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করেন।
পরে মালয়েশিয়ার রীতি অনুযায়ী মসজিদে বিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও পিজাবাত কাডির (কাজী) সহযোগিতায় স্থানীয় মসজিদের ইমাম কনের বাবার বাড়িতেই বিবাহের কাজ সম্পাদন করেন।
তরিকুল ইসলাম আমিন বলেন, ইয়াসিনকে আমি প্রায় দশ বছর ধরে চিনি। অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের। ইয়াসিন স্থানীয় পাচারের (বাজার) একজন সবজি ব্যবসায়ী। তাই তার এমন জরুরি সময়ে আমি তার পাশে দাঁড়াই।
তিনি বলেন, শুধু ইয়াসিন নয় মালয়েশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে আরো অনেক বাংলাদেশি ছেলেকে আমি সহযোগিতা করেছি। এছাড়া মালয়রা মুসলমান আমরাও মুসলমান সুতরাং আমাদের দুই দেশের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হলে ভালো ছাড়া খারাপের কিছু তো দেখছি না।
বিয়ে শেষে সিতি অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। বহু দিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। সিতি অনেক খুশি। বিয়েতে বাংলাদেশি অনেক মেহমানকে আপ্যায়ন করা হয়েছে।
| আপডেট: ০৫:০০ অপরাহ্ন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বুধবারচাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ/২০১৫।