মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারায় ৭০ বছর বয়সেও বয়স্ক ভাতা জোটেনি চাঁদপুর কল্যানপুর ইউনিয়নের অসহায় বৃদ্ধা রোকেয়া বেগমের। একই ভুক্তভোগী তার ৯৫ বছর বয়সী অসহায় বৃদ্ধ মা তফুরী বেগম।
জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যানপুর ইউনিয়নের রংঙ্গের গাঁও গ্রামের মৃত কালু ক্বারীর মেয়ে বৃদ্ধ রোকেয়া বেগম।
ঘরে অসহায় অসুস্থ মা এবং দুই মেয়ে রয়েছে। বহু বছর আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন। স্বামীহারা অসহায় রোকেয়া বেগম বৃদ্ধ মা এবং দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোন রকম বেঁচে আছেন। ১ মেয়েকে কয়েক বছর পূর্বে বিয়ে দিলেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই মেয়ের স্বামীও মারা যান। মেয়ের ঘরে ২ সন্তান রয়েছে।
একদিকে নিজে বিধবা অসহায়, অন্যদিকে বৃদ্ধ ঘরবন্ধী মা এবং দুই মেয়ে ও মেয়ের ঘরের দুই নাতনিকে নিয়ে অভাবের সংসারে যেনো জীবিত থেকেও মৃত হয়ে আছেন রোকেয়া বেগম। তাই নিরুপায় হয়ে চক্ষুলজ্জা ভুলে চুপি, চুপি ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ান। ভিক্ষা করে প্রতিদিন যা পান তা দিয়েই কোন রকম টানা পোড়েনে চলে রোকেয়া বেগমদের জীবন সংসার।
সংসারে এতো বড় বোঝার ওজন কমাতে একটু সহযোগিতার জন্য একটি বয়স্ক ভাতার বই করে দিতে বার, বার ঘুরেছেন এলাকার বিভিন্ন জনের কাছে। কিন্তু কেউই রোকেয়া বেগমের প্রতি সহানুভূতীর হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেননি। বিনিময়ে পেয়েছেন ধমক, আর মিথ্যা আস্বাস।
রোকেয়া বেগম জানান, একটি বয়স্ক ভাতার বই পাওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সালামত খানের কাছেও বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। কিন্তু ওয়ার্ড মেম্বার সহ অন্যান্যরা একটি কথাই বলেছেন,যদি রোকেয়া বেগম পাঁচ হাজার টাকা বিনিময় দিতে পারেন তবেই তাকে বয়স্ক ভাতার বই পাইয়ে দেয়া হবে। কিন্তু হতভাগী অসহায় রোকেয়া বেগমের যে নুন আনতে পান্তা পুরোয়।
পাঁচ হাজার টাকা মেনেজ করা তো তার কাছে সোনার হরিণের মতো। আর স্থানীয় মেম্বার এবং বিভিন্ন দালালদের পাঁচ হাজার টাকা দিতে না পারায় আজো তার কপালে একটি বয়স্ক ভাতার বই জোটেনি।
অথচ বর্তমান সরকার সারাদেশে এসব অসহায় বয়স্কেদর জন্য বয়স্ক ভাতা প্রদান করলেও প্রকৃত বয়স্কদের কপালে জুটছে না সেসব বয়স্ক ভাতা। সরকারের দেয়া এমন বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত বৃদ্ধ রোকেয়া বেগম ও তার প্রায় শত বছর বয়সী মাতা তফুরী বেগম।
তাই জীবনের এমন শেষ প্রান্তে এসেও যেনো অসহায় বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম ও তার মাতা তফুরী বেগম যেনো সরকারের দেয়া বয়স্ক ভাতার সুবিদা ভোগ করতে পারেন, সেজন্য চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সালামত খানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আপনার ক্ষমতা থাকলে আপনি তাকে যতটা ইচ্ছে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিন। আমার কাছে তো কত মানুষই আসে আমি সবাইকে কিভাবে বয়স্ক ভাতার কার্ড দিবো।
প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি