চাঁদপুরে ৬ ব্যাংকের ৯০ শাখায় রেমিটেন্স অর্জন ১৪৭৮ কোটি টাকা

চাঁদপুরে চলতি বছরের ২০২৪ এর জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এ ৯ মাসে সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে চাঁদপুরের বৈধ ৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রবাসী থেকে ৬ ব্যাংকের ৯০ শাখার মাধ্যমে রেমিটেন্স অর্জন ১৪৭৮ কোটি টাকা ৮৬ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট চাঁদপুরের ৬ ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ২ অক্টোবর ২০২৪ এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, সোনালী ব্যাংকের ২০টি শাখায় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স, জনতা ব্যাংকের ১৭ টি শাখায় ৩৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স, অগ্রণী ব্যাংকের ২১ টি শাখায় ১৮০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২৮টি শাখায় ১২৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৩ টি শাখায় ২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ চাঁদপুরে ৪ টি শাখা ও ২ টি উপ-শাখার মাধ্যমে ৮৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার রেমিট্যান্স অর্জন করে।

বর্তমান সরকার বৈধ রেমিটেন্স যোদ্ধকে ইতোমধ্যেই ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সরকার ভিআইপি লাউঞ্জে রেমিটেন্স যোদ্ধাগণ গমন-আগমনসহ যথাযথ সম্মান জানাতে বিমানবন্দর কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো প্রকার হয়রানী বা হেনেস্তা হওয়ার অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, চাঁদপুরের মূখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো.মমতাজ উদ্দিন তাঁর কার্যালয়ে ২ অক্টোবর এ ব্যাপারে বলেন,‘ প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স দেশের উন্নয়নের গতিতে তরান্বিত করছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার ডলারের সংকট নিরসনে অসামান্য অবদান রেখে চলছে। পাশাপাশি রিজার্ভ বাড়ছে ।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ ব্যাংকের মাধ্যমে ঐ রেমিটেন্স পাঠালে গ্রাহককে ২.৫০% হারে প্রণোদনা দিচ্ছে।’

চাঁদপুরে রূপালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা চাঁদপুরের রেমিটেন্স অর্জন সম্পর্কে বলেন,‘ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো রেমিটেন্স। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে বৈদেশিক রেমিটেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চাঁদপুরসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিন্টেসর ভূমিকা অপরিহার্য। বিশেষ করে চাঁদপুরের গ্রামে-গঞ্জে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের কারণে প্রতিটি বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ভবন দেখা যাচ্ছে। রূপালী ব্যাংক তাদের সার্বিক লেনদেনের জন্য যথেষ্ট আন্তরিকতার সহিত কাজ করে থাকে।’

প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের প্রবাসীদের শ্রমের বিনিময়ে পাঠানো রেমিটেন্স জেলার প্রায় দু’শতাধিক ব্যাংক শাখা ও কয়েক শ’শপিংমলে অর্থের তারল্য সৃষ্টি করছে। জেলায় প্রবাসীদের নিজ নিজ বাড়ি বা ভবন, ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিক্ষা, কৃষি, স্ব-স্ব এলাকায় অবকাঠামোর উন্নয়ন, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ক্ষেত্রে চিত্র পাল্টে দিয়েছে প্রবাসীদের বৈদেশিক র‌্যামিটেন্স। সম্প্রতি চাঁদপুর জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্যে জানা গেছে- পৃথিবীর ১৬২টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীর বেলায় দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চাঁদপুরের অবস্থান ৬ষ্ঠ ।

চাঁদপুরের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান মতে -চাঁদপুরের বৈধ ৩ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমজীবী নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে তাঁদের নিকটতম স্বজনদের কাছে ব্যাংক ও অন্যান্য এজেন্সির মাধ্যমে র‌্যামিটেন্স প্রেরণ করেন। অবৈধ বা বিকাশ বা অন্যান্যভাবে রয়েছে আরো অসংখ্য র‌্যামিটেন্স অর্জন যার কোনো পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরব। এর পরের স্থান হলোকুয়েত,কাতার, বাহরাইন,লেবানন,জর্ডান ও লিবিয়া। নদীমাতৃক চাঁদপুরের জন্য এটি একটি বিশাল প্রাপ্তি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চাঁদপুরের প্রবাসীদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলোতে শ্রম ব্যয় করছেন। মালয়েশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, সিংগাপুর, জাপান,দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের প্রবাসী কর্মজীবী রয়েছে। তাঁরাই এসব রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

চাঁদপুরের প্রবাসীগণ প্রতিমাসে বিভিন্ন অর্থলগ্নী আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে ঐ সব র‌্যামিটেন্স প্রেরণ করে থাকে । কোনো কোনো ব্যাংক কেবলমাত্র গোপন একটি পিন নাম্বারের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছেন। অনেক প্রবাসী গ্রাহক তাদের ব্যক্তিগত হিসাবেও অর্থ প্রেরণ করেন।

এদিকে চাঁদপুরের উত্তরা, ফার্মাস, মার্কেন্টাইল, প্রাইম,ডাচ-বাংলা, সিটি, ন্যাশানাল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ট্রাস্ট প্রভৃতি ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ লেনদেন করলেও চাঁদপুরে এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগীয় অফিস কুমিল্লা থাকায় এবং বিকাশ লেন-দেন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এ প্রতিবেদনে তা’ উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি বলে চাঁদপুর টাইমসের এ প্রতিবেদনে যুক্ত করা যায়নি।

প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্স দেশের রিজার্ভ বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের প্রতিটি বৈদেশিক রেমিট্যান্স ডেস্ক ও হেলপ ডেস্ক আলাদাভাবে সেবা প্রদানের জন্যে খোলা হয়েছে। ব্যাংক শাখা এ ক্ষেত্রে সব্বোর্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর। প্রবাসীরা টাকা প্রেরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাংক তার গ্রাহককে কাংখিত অংকের টাকা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত বিভিন্ন অর্থলগ্নি এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রবাসীরগণ তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে পছন্দের ব্যাংক শাখায় ওই অর্থ প্রেরণ করেন।

আবদুল গনি,
৪ অক্টোবর ২০২৩
এজি

Share