প্রধান শিক্ষক থেকেও ছাত্রী বয়সে দু’ বছরের বড় । ৬৫ বছর বয়সে নাতি-নাতনিদের সাথে এখন স্কুলে যাচ্ছেন লাকসামের নুরজাহান বেগম মধু।
তাঁর ২ ছেলে ৩ মেয়ে। বড় ছেলের মেয়ে আছমা আক্তার সুমি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। অন্য ৩ নাতি, নাতনী সাইফুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান ও মিম গ্রামের মনপাল ফুলকলি বিদ্যানিকেতনে পড়ে। তাদের সাথে স্কুলে যান মধু।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি তিনি এখানে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামের আবদুল করিমের স্ত্রী নুরজাহান বেগম মধু। বাবার বাড়ি একই গ্রামে। অল্প ক ’ দিনে তিনি স্কুলের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রিয় দাদি হয়ে উঠেছেন। স্কুলের ১০ জন শিক্ষক রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিনের বয়স ৬৩ বছর।
মনপাল ফুলকলি বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন জানান, নুরজাহান বেগম মধুর এ বয়সে লেখাপড়ার আগ্রহ দেখানোর বিষয়টি ব্যতিক্রম। আমাদের শিক্ষকরা যতœ দিয়ে তাকে পাঠদান করছেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো.মাসুদুল হক বলেন, অল্প সময়ে শিক্ষার্থীরা তাকে আপন করে নিয়েছে। আমরা তাঁর বেতন মওকুফ করে দিয়েছি। তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
নুরজাহান বেগম মধু বলেন, ‘ আমাদের মনপাল গ্রামে আগেও প্রাথমিক ছিলো না । এখনও নেই। দূরে গিয়ে পড়ার পারিবারিক সামর্থও ছিলো না। কম বয়সে বিয়ে হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের কিছু লেখাপড়া করিয়েছি। এখন নাতি-নাতনিরা লেখা-পড়া করছে। তাদের দেখে আমারও পড়তে ইচ্ছে করছে। আমি ৩০ বছর ধরে এ এলাকায় ধাত্রীর কাজ করছি। বিভিন্ন সংস্থার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ’
তারা বলেছেন, আমি কিছু লেখা-পড়া করলে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন। তাই স্কুলে ভর্তি হয়েছি। আমি ৫ম শ্রেণি পাশ করতে চাই। চোখের সমস্যার জন্য পড়তে পারি না। ডাক্তার বলেছেন ছানি অপারেশন করতে হবে। এতো টাকা তো আমার কাছে নেই।
লাকসাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, এ বয়সে লেখা-পড়া করা ব্যতিক্রম। আমরা নুরজাহান বেগম মধুর সাফল্য কামনা করি। সমাজ সেবা বা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা.মজিবুর রহমান বলেন, ছানি অপারেশনের বিষয়ে কুমিল্লার আলেখারচর এলাকার চক্ষু হাসপাতাল যোগাযোগ করা হলে তিনি চিকিৎসা সহায়তা পেতে পারেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬: ৫০ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার
এজি/ডিএইচ