ট্রাম্পের ভাগ্য চূড়ান্ত হবে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ সদস্য ভোট দেবেন সোমবার (১৯ ডিসেম্বর)। তাদের ভোটের উপর নির্ভর করছে দেশটির রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ভাগ্য’।
নির্বাচন শেষ, ফল ঘোষণাও শেষ। তারপরও আজকের দিনটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। তার চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণের দিন আজ। মার্কিন নির্বাচনের ব্যতিক্রমধর্মী নিয়ম অনুসারে ৫৩৮ জন ইলেকটর বা নির্বাচক ১৯ ডিসেম্বর দেশজুড়ে কংগ্রেস ভবনগুলোয় ভোট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকেন।
ইলেকটররা সাধারণত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরই ভোট দেন। তবে এবার ট্রাম্পের অনেক ইলেকটরের বিদ্রোহের শঙ্কা থাকায় আজকের নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন আইন অনুসারে কোনো ইলেকটর যদি প্রতিশ্রুতির বাইরে অন্য প্রার্থীকে ভোট দেন, তাহলে সেটি আইবিরুদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এর আগেও ১৫৭ জন ইলেকটর প্রতিশ্রুতির বাইরে ভোট দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে এসব ইলেকটরদের ‘ফেইথলেস’ ইলেকটর বলা হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট নিছক একটা আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হলেও ৮ নভেম্বরের ভোটে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয় এ পদ্ধতিকে আবার আলোচনায় নিয়ে এসেছে। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ সেই আলোচনাকে জোরদার করেছে।
৮ নভেম্বরের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হিলারি ক্লিনটন বেশ এগিয়ে থাকলেও অধিকাংশ ইলেকটোরাল ভোট জিতে নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে যান। আজ সেই নির্বাচকেরা ঠিকমতো নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিলে ট্রাম্প পাবেন ৩০৬ ভোট, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রয়োজনীয় ২৭০-এর চেয়ে অনেক বেশি।
ট্রাম্পের জন্য শঙ্কার বিষয় হলো, তাঁর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নির্বাচক ‘বিদ্রোহ’ করে বসলে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাঁদের বেশ কয়েকজন এ ধরনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। নির্বাচনে রুশ সরকার ট্রাম্পকে জেতাতে কলকাঠি নেড়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত ৬৭ জন নির্বাচক এ বিষয়ে আরো তদন্ত দাবি করেছেন।
এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোটার রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারিকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে অঙ্গরাজ্যগুলোতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ৫৩৮ জন ইলেকটর বা নির্বাচককে বেছে নিয়েছেন। যে প্রার্থী কোনো অঙ্গরাজ্যের সাধারণ জনগণের ভোট (পপুলার ভোট) বেশি পাবেন, তিনিই ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকদের ভোট পেয়ে যান।
হিলারির ঝুলিতে রয়েছে ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোট। ট্রাম্পের ইলেকটরদের মধ্যে ৩৮ জন তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে হিলারিকে সমর্থন দিলে জানুয়ারিতে তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এরই মধ্যে ক্রিস্টোফার সাপরান নামে রিপাবলিকান দলের একজন নির্বাচক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তিনি তাঁর দলের প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন দেবেন না। আরো কয়েকজন রিপাবলিকান নির্বাচক ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ‘হ্যামিলটন ইলেকটর’ হিসেবে পরিচিত কিছুসংখ্যক রিপাবলিকান নির্বাচকের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন ডেমোক্র্যাট নির্বাচকেরা। ‘হ্যামিলটন ইলেকটররা’ ট্রাম্পের পরিবর্তে অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজকের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে তিন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, ট্রাম্প তাঁর কাঙ্ক্ষিত ভোট পেয়ে বিজয়ী হবেন। দ্বিতীয়ত, রিপাবলিকান নির্বাচকদের বেশ কয়েকজন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন, যার ফলে হিলারি জিতে যেতে পারেন। তৃতীয়ত, কোনো প্রার্থীই যদি ন্যূনতম ২৭০টি ভোট নিশ্চিত না করতে পারেন, তাহলে ন্যূনতম ২৬টি অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী প্রার্থী হবেন প্রেসিডেন্ট।
এক্ষেত্রেও বিষয়টা অমীমাংসিত থেকে গেলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর কংগ্রেসে ভোট হবে। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় ভোট হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা না গেলে নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:১৩,এম ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬,সোমবার
ইব্রাহীম জুয়েল