বাবার চাকরির সুবাদে থাকত চট্টগ্রামের পাহাড়তলি উপজেলায়। পড়ত পাশেই অবস্থিত পাহাড়তলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে। কিন্তু করোনা মহামারিতে স্কুলের দীর্ঘ বিরতি। সময়টি কাজে লাগানোর চিন্তা এলো মাথায়। পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করল অলস বসে না থেকে বিরতিতে পবিত্র কুরআন মুখস্থ করবে, হাফেজ হবে।
এতদিনে পাহাড়তলি ছেড়ে চলে আসা হয়েছে জন্মস্থান আনোয়ারায়। হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হল আনোয়ারার আল জামেয়া আরবিয়া ইয়াহইয়াউল উলুম (বোয়ালিয়া হোসাইনিয়া নতুন মাদরাসা)-এর হিফজ বিভাগে। অবাককরা বিষয় হলো-মাত্র ১২১ দিনে পুরো কুরআনে কারিম মুখস্থ করে হাফেজ হল এই কিশোর।
বলছিলাম চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার অন্তর্গত ধোয়ালিয়া গ্রামের মুহাম্মদ ইদ্রিসের ছেলে সফওয়ানের (১৩) কথা। গত ৮ নভেম্বর তার হিফজ সম্পন্ন হয়।
মেধাবী এ কিশোর সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম তার বড় ভাই হাফেজ মুহাম্মদ সুলাইমানের কাছে।
তিনি বলেন, আমরা চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সফওয়ান সবার ছোট। খুবই নরম প্রকৃতির ও। স্কুলে পড়তে চাইত। কিন্তু এক্ষেত্রে বলা যায়-করোনা আমাদের জন্য ‘কল্যাণ’ নিয়ে এসেছে। করোনার বিরতিতে ও হিফজ পড়তে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে আমরা পরিবারের সবাই ওকে মাদরাসায় ভর্তি করাই এবং বিস্ময়করভাবে মাত্র ১২১ দিনে হিফজ শেষ করল আলহামদুলিল্লাহ! ওর এই কীর্তিতে আব্বু-আম্মু এতটাই খুশি হয়েছে যে, গতকাল দুজনের চোখেই আনন্দাশ্রু ছিল।
সফওয়ান কি এখন মাদরাসায়-ই পড়বে নাকি স্কুলে ফিরে যাবে-বড় ভাইকে এ প্রশ্ন করলে তার উত্তর, ‘ও এখন দুটিই চালিয়ে যাবে; সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি সফওয়ান ধর্মীয় শিক্ষাও অর্জন করতে চায়। সবার কাছে তার সফলতার জন্য দোয়া চাই।’
সফওয়ানের হিফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ আত ত্বলহা বলেন, ‘আমাদের এখানে ভর্তি হবার পর থেকেই দেখি-ও খুব মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছেলে। প্রতিদিন সে পবিত্র কোরআনের ৫ থেকে ৭ পৃষ্ঠা মুখস্থ শোনাত। আমরা এরকম মেধাবী খুব কম ছাত্রই পাই। ওকে নিয়ে আমরা গর্বিত। আল্লাহ ওকে অনেক বড় বানাবেন-এই দোয়া করি।’
এদিকে স্কুল পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১২১ দিনে (চার মাসে) হাফেজ হওয়ার প্রেরণার উৎস সম্পর্কে সফওয়ান বলেন, আমার শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। আর আব্বু-আম্মুর দোয়া তো ছিলই। তবে আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ সামর্থ দিয়েছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি তার অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি।