প্রবীণ ও সিনিয়র শিক্ষককে মুঠোফোনে গালাগালের ক্লিপ ভাইরাল, শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসাধাচরণ, ট্রাস্টের নিয়ম ও ঐতিহ্যকে ভুলন্ঠিত করায় অভিযুক্ত চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গত ৪ দিনেও আন্দোলনের মুখে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেননি।
রোববার (৮ এপ্রিল) স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা অধক্ষের কক্ষের দরজায় তার বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান লিখে পোস্টার সাটিয়েছে।
পোস্টারগুলো স্কুলের বিভিন্ন দেয়ালেও দেখা গেছে।
শিশু শ্রেনী থেকে ৫ম শ্রেনী পযর্ন্ত কিছু ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অভিবাবকরা সঙ্গে করে নিয়ে আসতে ও যাইতে দেখা যায়। স্কুল চলাকালীন সময়ের পূর্বে ও পরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, অযোগ্য-আদক্ষ ও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে অশুভ আচরণকারী ড. আবদুল গাফফার। তাকে এ সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণ না করা পযর্ন্ত বিক্ষোভ চলবে। প্রয়োজন হলে আমরা আরো কঠিন আন্দোলনের ডাক দেব। এ জন্য আমরা ক্যাম্পাসের ভিতরে ও বাহিরে অবস্থানে বিক্ষোভ করছি। পুলিশের বাধার কারণে সকলে একত্রিত হতে পারছে না।
এসময় তারা স্থানীয় একটি দৈনিকের নাম ধরে বলেন, ওই পত্রিকাটি অযোগ্য ও অধ্যক্ষকের পক্ষে সাফাই গেয়ে তাকে আবারো এ বিদ্যালয়ে অধিষ্ঠিত রাখতে চেষ্টা করছেন। এর আগেও তারা আল-আমিন একাডেমির সম্মান ক্ষুন্ন করতে কল্প-কাহিনী বানিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে।
একাডেমীর সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী মো: মুরাদ হোসেন জানায়, আমরা শিক্ষকবৃন্দ পূর্বের ন্যায় কর্মদিন পালন করছি। শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে ক্লাস করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। সকল শিক্ষকরাই পূর্বের ন্যায় ক্যাম্পাসে আসে ও ক্লাস শেষ হওয়া পযর্ন্ত অবস্থান করে।
শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয় এ প্রশ্ন করলে বলেন, মোট শিক্ষার্থীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অনুপস্থিত। তাদেরকে ড্রেস বিহীন রাস্তায় দেখা যায়। তখন তাদেরকে ক্লাসে না আসার বিষয় অভিবাবকসহ জিজ্ঞাস করলে তারা বলেছে, ড. আব্দুল গাফফার পদত্যাগ না করা পযর্ন্ত তারা ক্লাসে আসবে না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না আসার বিষয় জানতে চাইলে জানায়, ট্রেকনিক্যাল স্কুলে বি এম শাখার কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বে আছেন। তাকে মোবাইলে জানায় পরীক্ষার কেন্দ্রে আছেন। অন্যভাবে জানাযায়, এইচএসসি পরিক্ষা প্রতিদিন হয় না, ১০টায় শুরু হইলেও ১টায় শেষ হয়ে যায়। তার পরেও ড. আবদুল গাফ্ফার ক্যাম্পাসে আসে না। পুলিশ তাদের নিয়মিত এখানে রুটি ওয়ার্ক করে থাকেন।
সুত্রে জানা যায়, গভর্ণিং বডি ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল গাফফারকে এক বছরের জন্য ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে প্রিন্সিপাল হিসেবে নয়। কমিটির বক্তব্য উনার কর্মকান্ড ভালো হলে উনারা দেখবেন। বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবকবৃন্দ কেউই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয়। এই একটি বছরে আব্দুল গাফফার এর সফলতা বলতে স্কুলে মারাতœকভাবে ফলাফল বিপর্যয়, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির পরিমান কমে যাওয়া এবং শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করা।
একাডেমীর সাবেক ৯৭ ব্যাচ জানায়, আল-আমিন একাডেমী একটি প্রতিষ্ঠান নয়, আল-আমিন একাডেমী একটি আদর্শের নাম। যে আদর্শ ছাত্ররা বহন করে চলেছে, তাদের কর্মে, শিক্ষা, ও জীবনযাত্রায়। যে প্রডাক্ট সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে, সে প্রডাক্টে আলোকিত হচ্ছে দেশ। প্রতিষ্ঠানটির এমন দুঃসময়ে সকলের উচিত এর পাশে দাঁড়ানো। যোগ্য লোককে যোগ্য পদে অসিনের মধ্য দিয়েই হতে পারে এর সঠিক সমাধান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ শিক্ষক জানায়, আল-আমিন একাডেমীতে পড়লেই যে জামাত-শিবির হবে, এ ধারণা কেবলমাত্র স্বার্থান্বেষী মহল ছাড়া আর অন্য কেউ করে না। কারণ বর্তমান সময়ের, ক্ষমতাসীন দলের অনেক বড় বড় ছাত্র নেতাই এই স্কুলের ছাত্র। তারা তো কখনো বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেনা, তাদেরকে শিবির করার জন্য কেউ একটি বারও বলেছে? তাহলে অন্ধভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে দোষ দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে কেন?
অভিবাবকগণ বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অযোগ্যতা আর অদক্ষতায় প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পথে। সকলেই অতি শীঘ্রই ম্যানেজিং কমিটির আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট