রাজধানী শান্তিবাগের বাসিন্দা আকরামুল আহসান কাঞ্চন (৪৭)। গত ১০ বছর ধরে ৪৭টি সাজানো মামলার আসামি হয়ে জেলের ঘানি টানছেন তিনি। চা্দঁপুরেও মিথ্যা ও সাজানো একটি মামলায় তাকে হাজিরা দিতে হবে চাঁদপুরের আদালতে।
অথচ আকরামুল আহসান কাঞ্চনের বাড়ি-ঘর কিংবা যে বাদী জনৈক মোঃ সোহেল কারোরই বাড়ি-ঘরের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও এর আগে ২০১০ সাল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক মামলা থেকে একরামূুল নিষ্পত্তি পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন। অনেক মামলা মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় একেবারেই খালাস পেয়েছেন। সাজানো মামলাবাজ সংঘবদ্ধ চক্র কখনো মাদক বিক্রেতা, চোর-ডাকাত, কখনো আদম ব্যবসায়ী বলে মামলাগুলো ঠুকে দিচ্ছে।
হয়রানির শিকার এই কাঞ্চনকে আরেকটি মিথ্যে মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে যশোরে আটক করা হয়। ওই মামলায় তিনি আগে জামিনে থাকলেও সেখানে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে কাঞ্চনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
কাঞ্চনকে জানানো হয় গত বছর তথা ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ চাঁদপুরের আদালতে হাজীগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা জনৈক মোঃ সোহেল (পিতা- নুরুল হক, মাতা-ছালেহা বেগম, গ্রাম- রাজারগাঁও) এই নামীয় একজন তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্র্ইাব্যুনাল ও মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে একটি চাঁদপুরে মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং- (০৩/২০১৯ইং)। যার বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার সওদাগর পাড়া কাওয়াখোপ এলাকা।
যে মামলায় তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কাঞ্চন কখনও চাঁদপুরে আসেন নি এবং তার বাড়ি-ঘরও চাঁদপুরে না। মামলায় তার ঠিকানা উলে করা হয়েছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় প্রফেসর পাড়া, বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার শান্তিবাগে। মামলার বাদী সোহেলের ঠিকানার খোঁজে গেলে রাজারগাঁও গ্রামে তার কোন অস্তিত্ব্ই মিলেনি। যে বাড়ির কথা বলা হয়েছে তেমন নামে কোন বাড়ি নেই।
ওই এলাকার চেয়ারম্যান আবদুল হাদী মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, মামলায় উল্লেখিত সোহেল নামে কোন ব্যক্তি ওই ইউনিয়নেই নেই। তাছাড়া সেই ইউনিয়নের কোন সোহেল বা তার বাবা কক্সবাজারে অবস্থান করেন না। এদিকে মামলার বিবাদীর খোঁজে একই উপজেলার পৌরসভাধীন প্রফেসর পাড়া এলাকায় গিয়েও আকরামূল আহসানের স্থায়ী ঠিকানার কোন খোঁজ মিলেনি। প্রফেসর পাড়া এলাকা যার নামে তথা হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের (অব.) সহকারী অধ্যাপক আবুল কালামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৯০ সাল থেকে তিনি ওই এলাকায় বসবাস করছেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে তিনি আকরামুল আহসান ও তার পিতা আনোয়ার উলাহ নামে কাউকে চিনেন না।
এদিকে মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ ঘটনাস্থল উল্লেখ করে হাজীগঞ্জ রাজারগাঁও বেপারী বাড়ি। ঘটনার বিবরণে জানায়, আসামী তার বাড়ি রাজারগাঁও এসে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। পরবর্তীতে একরামুল তার অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে টেকনাফে জনৈক শামসুর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে ১০/১২ জনও উপস্থিত ছিল। তাদেরকে বলা হয় মালয়েশিয়া যেতে এখন টাকা লাগবে না।
পরবর্তীতে একটি নৌকায় তুলে সমুদ্রে বড় জাহাজে অন্যদের কাছে তুলে দিয়ে চলে আসে। ১০/১৫ দিন চলার পর অজ্ঞাত আসামীরা থাইল্যান্ডে জঙ্গলে নিয়ে তাদের হাত-পা বেঁধে মারধর করে। এ অবস্থায় আসামী সোহেল পরিবারের মোবাইল নম্বর নিয়া ২ লাখ টাকা দিতে বলে, না হয় তাকে মেরে ফেলবে।
পরবর্তীতে তারা ২ লাখ টাকা দেয়। জঙ্গলে ৩ মাস কাটানোর পর আসামী তাদেরকে আলাসট্রা শহরে একটি কারখানায় আটক করে রাখে। এরপর ৯ মাস এখানে কাজের পর বিবাদী আকরামসহ তারা ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। পরে জেল খেটে তারা বাড়িতে আসে এবং এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাই্ব্যুনাল, চাঁদপুরে মামলা দায়ের করে।
এই মামলার বাদী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী আলহাজ্ব এ কে এম লোকমান হোসেনের সাথে তার মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, গত বছর ২৫ মার্চ জনৈক ব্যক্তি ঢাকা থেকে টাইপ করে মামলাটি লিখে আনে। পরবর্তীতে আমি সরল বিশ্বাসে আমার মক্কেল হিসেবে এটিতে স্বাক্ষর করি। এরপর গত ১ বছরে এই মামলার বিষয়ে আমার কাছে কেউই আসেনি।
অথচ আমাদের অন্যসব মামলায় বাদীর যোগাযোগ অবশ্যই তার আইনজীবীর সাথে থাকে। আগামী ২২ জানুয়ারি এই মামলার শুনানীর কথাও তিনি জানেন না বলে জানান।
এদিকে মামলার আসামীর স্ত্রী তামান্না আক্তার ঢাকা শেওয়াপাড়ায় বসবাসরত। তিনি বলেন, আমার স্বামী আকরামুলের বিরুদ্ধে সকল মামলাই ভুয়া। চাঁদপুরেরও মামলাটি ভুয়া। কারণ আকরামুল কখনো চাঁদপুরে যায়নি, এমনকি তার বাড়ি চাাঁদপুরেও না।
তিনি বলেন, সে কখনো মানব পাচারকারীর সাথে জড়িত ছিল না। কেন এই মামলাগুলো হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র নারায়ণগঞ্জে আমাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার জন্য এসব ভুয়া মামলা করছে।
তিনি বলেন, আমার দু’ ছেলে ও ১ মেয়ে। সন্তানরা ছোটবেলা থেকে তাদের পিতাকে জেল খাটতে দেখছে। এসব সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিচার দাবি করছি এবং আমার নিরপরাধ স্বামীর মুক্তি দাবি করছি।
স্টাফ করেসপন্ডেট