জাতীয়

৪২ লাখ শিশু কিডনি রোগীর জন্য ৩৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

নারায়ণগঞ্জের ওমর ফারুক (৫) মাত্র ৫ মাস বয়সেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। ৫ বছর ধরে শিশুটিকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন তার পরিবার। কিন্তু সুস্থতার কোনো আলামত মেলেনি এই কয় বছরে।

বর্তমানে শিশুটিকে চিকিৎসা জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগে নিয়ে এসছেন তার মা। বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এতো বছর ব্যয় মেটাতে সক্ষম হলেও উপায় না পেয়ে নাড়ি ছেঁড়া ধনের প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের শেষ সম্বল, ভিটে মাটি বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। সন্তানকে সুস্থ করতে কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে উত্তর জানা নেই শিশুটির মায়ের।

শিশুটির মা জানান, এখন মাঝে মধ্যে এমনও হয় নিজে না খেয়ে থাকার পরও তার সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পারছেন না।

চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি রোগের লক্ষণ হলো, শরীর ফোলা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের অস্বাভাবিক রং পরিবর্তন, দুর্গন্ধ ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা। এছাড়া কারো কারো ঘন ঘন জ্বর হওয়া, ক্ষুধামন্দ্যা, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা ও বয়স অনুপাতে শারীরিক বৃদ্ধি না হওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের কিডনি রোগ সম্পর্কে বেশিরভাগের ধারণা না থাকায় দীর্ঘমেয়াদি কিডনী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম ডক্টর টিভিকে বলেন ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। কারণ কিডনির রোগের উপসর্গের ব্যাপারে অনেকের ধারনা না থাকায় রোগীরা দেরি করে আমাদের কাছে আসেন। সময় মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আসলে তাদেরকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হতো।’

দেশে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম সমস্যা জনবলের মারাত্মক সংকট। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রনজিত রঞ্জন রায় ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘দেশে বর্তমানে শিশু কিডনি রোগী সংখ্যা প্রায় ৪২ লাখ। অথচ এর বিপরীতে বিশেষজ্ঞ কিডনি চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৩৫ জন। অর্থাৎ কিডনিতে আক্রান্ত প্রতি সোয়া ১ লাখ শিশুর জন্য গড়ে ১ জন বিশেষজ্ঞ কিডনি চিকিৎসক রয়েছে দেশে। এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুতই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি তাগিদ তাঁর।’

শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ডায়ালাইসিস। আর পরিপূর্ণ সুস্থ করে তুলতে অপরিহার্য কিডনি প্রতিস্থাপন।

পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ১০ বছরে দেশে হিমোডায়ালাইসিসের আওতায় এসেছে মাত্র ২১৫ জন শিশু। দীর্ঘমেয়াদি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস করেছে ২৬ জন শিশু। আর কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে মাত্র ১১ জন শিশু।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন বলেন, ‘যারা ডায়ালাইসিস নিচ্ছে বেশির ভাগই অনিয়মিত। এর অন্যতম কারণ ব্যয় মেটাতে রোগীরা পুরোপুরি অক্ষম হয়ে যাওয়া। এতে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে ঝড়ে যায় আক্রান্তের সিংহভাগ।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষই জানোনা তার শিশুটি কিডনিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব শিশুদের প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।

নিউজ ডেস্ক,১১ মার্চ ২০২১

Share