চাষি কামাল হোসেন এ মৌসুমে ৫০ শতক জমিতে আউশের আবাদ করেন। কয়েক দিন আগে তাঁর একটি খেতের বেশ কিছু আউশ ধানগাছের কাণ্ডে পচন দেখা দেয়। ধানগাছের রং হলুদ হতে থাকে। কিছু ধানগাছ মরেও গেছে। এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য কৃষি কর্মকর্তার খোঁজ করেন। জানতে পারেন, তাঁর ইউনিয়নে কৃষি কর্মকর্তার পদে লোক নেই।
কামাল হোসেন বলেন, ভাড়ার টাকা না থাকায় উপজেলা কৃষি কার্যালয়েও যেতে পারছেন না। আউশ নিয়ে তিনি পড়েছেন বিপাকে।
কামাল হোসেনের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। মাঠপর্যায়ে (ইউনিয়ন পর্যায়ে) প্রয়োজনীয়সংখ্যক কৃষি কর্মকর্তা না থাকায় তাঁর মতো এভাবে অনেক কৃষক জরুরি প্রয়োজনে কৃষি ও প্রযুক্তিবিষয়ক পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা। পাচ্ছেন না প্রত্যাশিত ফসল। মাঠপর্যায়ের কৃষি কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের আওতাধীন ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদ ৪৩টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১১ জন। বাকি ৩২ পদ গত ছয় মাস থেকে দুবছর ধরে খালি। উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা ৪০ হাজার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষে কৃষকদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ, প্রণোদনা ও সহায়তা দেওয়া, রোগবালাই দমনে কৃষকদের যথাযথ দিকনির্দেশনা দেওয়া, সার্বিক কৃষি কার্যক্রম তদারকি করা, মাঠ দিবসগুলো বাস্তবায়ন করা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করাসহ আরও নানা কাজ করার দায়িত্ব এসব কৃষি কর্মকর্তার। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন করে এবং প্রতিটি পৌর এলাকায় একজন করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকার কথা। কিন্তু তাঁর উপজেলায় কয়েকটি ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কৃষি কর্মকর্তা নেই।
ওই কৃষি কর্মকর্তা জানান, উপজেলার সুলতানাবাদ, জহিরাবাদ, বাগানবাড়ি ও কলাকান্দাসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নে দুই বছরের বেশি সময় ধরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদে লোক নেই। এতে তাঁর উপজেলায় দাপ্তরিক ও মাঠপর্যায়ের কৃষি কার্যক্রমে স্থবিরতা চলছে। এসব শূন্যপদে জরুরিভিত্তিতে লোক নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলার লুধুয়া এলাকার কৃষক মুক্তার হোসেন বলেন, তাঁর এলাকায় অনেক দিন ধরে কৃষি কর্মকর্তা নেই। এতে আধুনিক ও মানসম্মত পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং রোগবালাই দমনে জরুরি প্রয়োজনে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ-দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের কৃষি কার্যালয়ে যেতেও অনেক ঝক্কি। কোনো কোনো সময় টাকাও থাকে না পকেটে। বিষয়টি কৃষি কার্যালয়ে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরকার বলেন, তিনি একটি ইউনিয়নে একটি কৃষি ব্লকে কাজ করছেন। ওই ব্লক ছাড়াও একই সঙ্গে পাশের ইউনিয়নের আরও তিন-চারটি ব্লকে তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তিন-চারজনের কাজ একজনের পক্ষে করা কষ্টসাধ্য। এতে কোনো কাজই ভালোভাবে করা যায় না। কর্মকর্তার অভাবে মাঠপর্যায়ে কৃষি তদারকির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মতলব করেসপন্ডেট,৭ জুলাই ২০২০