বিএনপিতে গতি আনার চেষ্টা ডিসেম্বরে ৪০ জেলা কমিটি হচ্ছে ।এর মধ্যে ৮-১০টি জেলায় সম্মেলনের দিনক্ষণও নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক জেলা মোট ৭৫টি।
তৃণমূলে দল গোছাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। প্রতিকূল পরিবেশের পাশাপাশি দলীয় কোন্দল বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কাজে ঘাম ঝরছে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতাদের। তার পরও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০টি জেলা কমিটি পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। নতুন বছরে সংগঠনে গতি আনতেই কমিটি পুনর্গঠনের তোড়জোড় চলছে। জানুয়ারির মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব অঙ্গসংগঠন এবং ঢাকা মহানগরী কমিটিও ঘোষণা করার কথাও ভাবছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, দল পুনর্গঠনে সার্বিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ নিয়ে গুলশানে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তত্ত্বাবধানে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান পুনর্গঠনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটি পুনর্গঠন কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নেতা-কর্মীদের পদচারণ লক্ষ্য করা গেছে। সূত্রমতে, ২০১৪ সালের এপ্রিলে শুরু করে এ পর্যন্ত বিএনপি ১৮-২০টির মতো জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে আংশিক কমিটির সংখ্যাই বেশি। আহ্বায়ক কমিটিও রয়েছে কয়েকটি জেলায়। আহ্বায়ক কমিটিগুলোও নতুন করে ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তবে নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারণ করা জেলাগুলোতেও আপাতত আংশিক কমিটি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। এ ছাড়া জেলায় সম্মেলন বা প্রতিনিধি সভা করে ঢাকায় কমিটি ঘোষণারও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। পরিবর্তিত পরিস্থিতি আর দলের ভিতরে নানা কোন্দল বিবেচনায় বিএনপির হাইকমান্ড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই আমরা বেশির ভাগ জেলা কমিটি পুনর্গঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে চলছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, দলের সাংগঠনিক ২১ জেলায় সমসংখ্যক সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে এসব টিম জেলাগুলোয় সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। ওইসব জেলার সাংগঠনিক সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করে তা দলের মহাসচিবের কাছে লিখিত প্রস্তাব আকারে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাস্তবতা অনেক কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ডিসেম্বসের মধ্যে অবশিষ্ট ৪০টি জেলাকে টার্গেট করে এগোচ্ছেন দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এর মধ্যে নভেম্বরেই ২৫টি জেলার কমিটি দেওয়ার চিন্তা রয়েছে তাদের। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলন কিংবা প্রতিনিধি সভা করার পরিবেশও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন এমন সময় চলে আসছে, বিরোধী দলের কোনো নেতার ছেলেমেয়ের বিয়ে কিংবা পারিবারিক মিলাদ মাহফিলের জন্যও পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তাও দেবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এত কিছুর মধ্যেও বেশ কয়েকটি জেলায় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
নভেম্বর-ডিসেম্বরে যেসব জেলায় কমিটি হবে : ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০টি জেলায় কমিটি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ; টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুর, জামালপুর, কুষ্টিয়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মাগুরা, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা উত্তর, রাজশাহী জেলা, রাজশাহী মহানগরী, শেরপুর, ঝালকাঠি, বান্দরবান, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, লক্ষ্মীপুর প্রভৃতি। এর মধ্যে বড় অংশই নভেম্বরের মধ্যে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির। বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের দিনক্ষণও নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো, ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ, ২২ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ, ২৬ নভেম্বর টাঙ্গাইল, জামালপুর ও কুষ্টিয়া এবং ২৭ নভেম্বর পিরোজপুর। এ ছাড়া ২৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগরে প্রতিনিধি সভা করবে বিএনপি।
যেসব জেলায় কমিটি হয়েছে : গঠিত পূর্ণাঙ্গ, আংশিক ও আহ্বায়ক কমিটিগুলো হচ্ছে : চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনো, ঢাকা জেলা, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম মহানগর, সিলেট জেলা, সিলেট মহানগর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর জেলা, রংপুর মহানগর, মেহেরপুর, মাগুরা, সৈয়দপুর, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, পঞ্চগড়, রাঙামাটি প্রভৃতি। আংশিক কমিটিগুলোর বেশ কয়েকটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিগুলোর এখন নতুনভাবে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পুনর্গঠনের কাজ থেমে নেই। আমরা নভেম্বরের মধ্যেই অন্তত ২০টি জেলায় কমিটি দেওয়ার কথা ভাবছি। বেশ কয়েকটি জেলায় কাউন্সিলের দিনক্ষণও নির্ধারণ করা হয়েছে। মোটামুটি পরিবেশ পেলে আমরা চলতি বছরের মধ্যেই তৃণমূলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারব।’বিডিপ্রতিদিন
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০৭ পি,এম ১২ নভেম্বর ২০১৬,শনিবার
ইব্রাহীম জুয়েল