মো. মুনসুর মিয়া। এলাকার সবাই তাকে গোরখোদক বক্কু মিয়া নামে চেনে। নিজ এলাকায় মনুষ মরলেই খোঁজ পরে বক্কু মিয়ার। ৩৬ বছর বয়সে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষের কবর খুঁড়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন মুনসুর ।
মধ্য রাত কিংবা ঝড়-তুফানেও মানুষের ডাকে মুহূর্তেই ছুটে আসেন মুনসুর মিয়া। বাবা আলফাজ মিয়ার হাত ধরে ছোট বেলা থেকেই মরা মানুষের কবর খোঁড়তে শিখেছিলেন।
বাবার মৃত্যুর পর এখন পুরাণবাজার অঞ্চলের একমাত্র ‘গোরখোধক’ তিনি। গত ক’বছর ধরে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একই এলকার মুনির হোসেন (৩০)।
চাঁদপুর শহরের আশপাশে পুরাণবাজার, বহরিয়া, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর, রঘুনাতপুর, জুটমিল, মাদ্রাসা রোডসহ বিভিন্ন গণকবরস্থানে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষের কবর করেছেন।
এ কাজে কারো কাছ থেকে নির্ধারিত কোনো টাকা নেন না তিনি। বখশিস হিসেবে প্রতিটি কবর করার জন্য মানুষ তাকে ১ থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে।
পারিশ্রমিকের জন্য মনে কষ্ট পান কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি টাকার জন্য কবর করিনা, আল্লাহর খুশি আর মানুষের উপকারের জন্য কবর করি। যতদিন বাচুম মানুষের জন্য কবর করুম’।
গভীর রাতে অথবা অন্য কোনো সময়ে কবর করতে গিয়ে ভয় পেয়েছেন কিনা? এক প্রশ্নে মুনসুর মিয়া বলেন, ‘পৃথিবীতে আমি খালি আল্লাহরে ডরাই। আল্লাহ ছাড়া আর কাউরে ডরাই না’।
মনসুর মিয়া হাতে সাবাল বা খন্তি নিয়ে হেটে গেলেই মানুষ বুজতে পারে ‘আজ কেউ একজন মরছে’। তাই হাতে সাবাল বা খুন্তি দেখলেই মানুষ প্রশ্ন করে ‘বক্কুভাই কার কবর করতে যাও’।
৩ মেয়ে ও ১ সন্তানের জনক মুনসুর মিয়ার নিজ এলকা মধ্য শ্রীরামদিতে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে উপার্জনের টাকা দিয়েই ৪ সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন।
কবর খুড়তে গিয়ে একাবার মাজায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। সেই ব্যাথায় ৫ বছর ধরে ভুগছেন। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা নিতে পারেনি।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছিলো ‘এ কাজ ছেড়ে দিন’। কিন্তু তিনি ‘আল্লাহকে খুশি’ করতেই কবর করেন।
মাজার ব্যাথা নিয়ে এখানো কবর করে যাচ্ছেন। মানুষ মরার পর মুনসুর মিয়া খোঁজ পড়লেও তার চিকিৎসার প্রয়োজনে আজো কেউ এগিয়ে আসেনি।
প্রতিবেদন- আশিক বিন রহিম