শিক্ষাঙ্গন

৩ হাজারের বেশি শূন্য পদে ওএসডি ১ হাজার ৮৪১

উপজেলা ও মফস্বল এলাকার সরকারি কলেজে তিন হাজারের বেশি পদ শূন্য থাকলেও ওএসডি বা কর্মহীন আছেন এক হাজার ৮৪১ জন শিক্ষক।

অথচ উপজেলা ও মফস্বল এলাকার দেড় শতাধিক সরকারি কলেজে চরম শিক্ষক স্বল্পতা বিদ্যমান। ওএসডি শিক্ষকদের কেউ স্বেচ্ছায়, কারও মফস্বলে চাকরিতে অনীহা এবং কেউ কেউ শিক্ষা ছুটির নামে ঢাকায় ওএসডি হয়ে আছেন।

আবার প্রভাবশালী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তদবিরের কারণেও অনেক শিক্ষককে ঢাকায় ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রাখতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে যেসব ওএসডি শিক্ষককে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি কলেজে সংযুক্ত রাখা হয়েছে, সেসব শিক্ষক নিয়মিত শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওএসডি শিক্ষকদের প্রায় সবাই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, আমলা ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিশিষ্ট নাগরিকদের আত্মীয়-স্বজন। এজন্য নানা চেষ্টা করেও সবাইকে উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজে বদলি করা সম্ভব হয় না। অসুস্থতার কারণেও অনেককে ঢাকায় রাখা হয়েছে। এছাড়া পারিবারিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণেও নারী শিক্ষকদের সুবিধাজনক কলেজে পদায়ন করতে হয়।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখা সূত্র জানায়, সারাদেশের মোট এক হাজার ৮৪১ জন ওএসডি শিক্ষকের মধ্যে কোন ধরনের কারণ ছাড়াই ওএসডি আছেন এক হাজার ৪৭৮ জন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ ডিগ্রি (পিএইচডি) অর্জনের জন্য ছুটিতে আছেন ২২১ জন। বিদেশে শিক্ষা ছুটিতে আছেন ৩৩ জন। আর শিক্ষা ছুটি নিয়ে দেশে আছেন ১০৯ জন শিক্ষক।

কোন কারণ ছাড়াই ছুটিতে থাকা এক হাজার ৪৭৮ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক ২৫৮ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৫৮০ জন, সহকারী অধ্যাপক ৬০০ জন এবং প্রভাষক ৪০ জন।

দেশে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক ৪১ জন এবং সহকারী অধ্যাপক ১৮০ জন। আর দেশে শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক ২৬ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৯ জন এবং প্রভাষক আছেন ৭৪ জন। এর মধ্যে প্রভাষকদের প্রায় সবাই প্রভাবশালী মহলের তদবিরে ওএসডি আছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কাউকে ওএসডি করি না, এটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারাই ওএসডি ও এটাচমেন্ট করে। তবে ঢাকার কলেজে সংযুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন।’

কলেজে শিক্ষক সংকট দিন দিন বাড়ছে- মন্তব্য করে মহাপরিচালক বলেন, ‘৩৫, ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসের নিয়োগ সম্পন্ন হলে আমরা অনেক শিক্ষক পাব। এতে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। কিন্তু শিক্ষক সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ একদিকে বিসিএসের মাধ্যমে সীমিতসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন, অন্যদিকে শিক্ষকরা অবসরে যাচ্ছেন। এতে সংকট থেকেই যাচ্ছেন।’

মাউশির কলেজ শাখার কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশের ৩৩৫টি সরকারি কলেজসহ (জাতীয়করণ ছাড়া) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫ হাজার ১১২টি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। শূন্য পদের প্রায় সবগুলোই উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজ, যার সংখ্যা প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০টি।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ সরকারের টানা দুই আমলে সারাদেশের প্রায় অর্ধশত কলেজ জাতীয়করণ করা হলেও সেগুলোতে পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এতে ওইসব কলেজে শিক্ষা ক্যাডার থেকেও শিক্ষক পদায়ন করতে হয়।

এ ব্যাপারে মাউশি মহাপরিচালক বলেন, ‘জাতীয়করণ হওয়া কলেজে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হলে পিএসসি (সরকারি কর্মকমিশন) আরও বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারতো। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটিও ধীরে ধীরে এগুচ্ছে।’

এছাড়াও সরকার সারাদেশের ৩২১টি উপজেলায় একটি করে বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের আলোকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাওয়া ১৯৯টি বেসরকারি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৪ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ৩০ জুন থেকেই ১৯৯টি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

দেশে উপজেলা ৪৮৯টি। এর মধ্যে সরকারি কলেজ রয়েছে ১৬১টি উপজেলায়। বাকি ৩২৮টি উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই।(দৈনিক শিক্ষা বার্তা)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ৯:৪৭ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, বুধবার
এজি/এইউ

Share