বাগেরহাটের প্রেমিক যুগলের দীর্ঘ তিন যুগ আগে মন দেয়া-নেয়া শুরু। এরপর অপেক্ষা শুধু প্রণয় থেকে পরিণয়ের। অবশেষে সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যবনিকা টানলেন এ যুগের ‘চণ্ডিদাস-রজকিনী’ খ্যাত খ্যাত প্রেমিক যুগল।
সাড়া জাগানো প্রেমের পরিসমাপ্তি (বিয়ে) দেখতে অসংখ্য উৎসুক লোকজন ভিড় জমায় কনের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খড়মখালী গ্রামে।
চণ্ডিদাস খ্যাত প্রেমিক হলেন চিতলমারী উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামের মৃত লোকনাথ বৈরাগীর ছেলে শুধাংশু বৈরাগী (৫৫)। আর রজকিনী খ্যাত প্রেমিকা পার্শ্ববর্তী খড়মখালী গ্রামের মৃত নিরোধ রায়ের মেয়ে নিভা রাণী রায় (৫০)।
স্থানীয়রা জানান, স্কুল জীবন থেকেই নিভা রাণীর সঙ্গে শুধাংশু বৈরাগীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে কলেজে পড়তে গিয়ে তাদের সম্পর্ক গভীর হয়। শিক্ষাজীবন শেষ করে তারা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলেও নানা সমস্যায় তা আটকে যায়। শুধাংশু-নিভার সম্পর্ক দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলেও নানা মতবিরোধ থাকায় তাদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। আশায় বুক বেঁধে থাকেন দু’জনে। এভাবেই একটি দুটি করে কেটে যায় তাদের প্রেমের ৩৬টি বসন্ত।
শুধাংশু বৈরাগী এলাকায় স্বঘোষিত চিরকুমার সংগঠনের সভাপতি হিসেবে পরিচিত। কয়েকবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। আর প্রেমিকা নিভা রাণী বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এলাকাবাসী জানান, কিছুদিন থেকে শুধাংশু আর নিভার বিয়ের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক স্থায়ী করতে এগিয়ে আসে অনেকেই। কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা চলে দুই পরিবারকে বিয়েতে রাজি করানোর। অবশেষে দুই পরিবারের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় হিন্দু রীতি অনুযায়ী অগ্নি সাক্ষী রেখে মালা বদলের মাধ্যমে প্রেমিকা নিভার বাড়িতে তাদের বিয়ে ধুমধামের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এত দিনের সব বাধাবিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে তাদের জয় হয় প্রেমের। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে দলে দলে নারী-পুরুষ কণের বাড়ি ছুটে আসে।
বিয়ে উপলক্ষে চারদিকে হই চই পড়ে যায়। বিয়েবাড়িতে লোক দাঁড়ানোর তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। পাশাপাশি এ বিয়েকে ঘিরে মিষ্টিমুখ ও রঙ মাখামাখি চলে রাতভর। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন চলছে এ বিয়ে নিয়েই আলোচনা।
এলাকার শ্রেষ্ঠ প্রেমিক জুটি হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া শুধাংশু আর নিভা রাণী এখন যেন অমর প্রেমের নায়ক নায়িকা। শুধাংশুর নিকট আত্মীয়রা জানান, ‘লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রজকিনী-চণ্ডিদাসের মতো তাদের প্রেম কাহিনী এখন লোকজনের মুখে মুখে। এমন প্রেমের বিয়ে আজকাল আর দেখাই যায়না।
অনেকেই বলছেন, শুধাংশু সময়মতো বিয়ে করলে আজ নাতি-নাতনির মুখ দেখতেন। এতদিন ধরে কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে, এমন নজির খুব কম রয়েছে। রজকিনী-চণ্ডিদাসের প্রেমকাহিনীর চেয়ে তাদের প্রেম কোনো অংশেই কম নয় বলে দাবি করেন অনেকেই।
প্রেমিক শুধাংশু বৈরাগী বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাদের প্রেম সার্থক হয়েছে। জয় হয়েছে ভালোবাসার। নববধূকে নিয়ে বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটাতে চাই।’
সত্যিকারের প্রেম কখনো বিফলে যায় না বলেও অভিমত শুধাংশু বাবুর। তিনি বলেন, প্রেমিক-প্রেমিকারা যেন কেউ ভুল করেও কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে না নেয়। এ পরামর্শই দিলেন তিনি।
(সূত্র- বাংলামেইল)