৩৬তম বিসিএসে চূড়ান্ত সুপারিশকৃত তালিকায় শিক্ষা ক্যাডারে তৃতীয় স্থান দখল করেন মো: মিজানুর রহমান। তিনি ২০০২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ২.৭৫ পাওয়ায় শিক্ষা জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন এবং এ কারণে কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে প্রথম বছর বিরত থাকেন। তিনি আবার পরের বছরে কলেজে ভর্তি হন।
ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে বাদ পড়েন। ঢাকাতে পড়ার ইচ্ছা থেকে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি ২০১২ সালে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেন। ৩৪তম বিসিএসে তিনি ভাইভা ফেল করেন, ৩৫তম বিসিএসে লিখিত ফেল করেন এবং ৩৬তমে শিক্ষা ক্যাডার লাভ করেন। পাশাপাশি ৩৭তমে জেনারেল ক্যাডারে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন।
আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
মো: মিজানুর রহমান: আমি আথাকরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ২.৭৫ পেয়ে পাশ করি। ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় খুব হতাশ হয়ে পড়ি এবং ওই বছর আর কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে বিরত থাকি। পরবর্তীতে অনেক চিন্তা ভাবনা করে ২০০৩ সালে রামগঞ্জ সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে যাই। এরপর থেকে শুরু করলাম নতুন উদ্যমে পড়াশুনা। ২০০৫ সালে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.২০ পেয়ে উপজেলায় প্রথম হই। তারপর ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমান থেকে বাদ পড়ি।
পরিবার সবার ইচ্ছে ছিল ঢাকাতেই পড়তে হবে তাই ঢাকার বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা না দিয়ে ঢাকা কলেজে ভূগোলে ভর্তি হই। ভূগোল থেকে অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। এবং মাস্টার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাশ করি।
আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিপিএ ২.৭৫ নিয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশকৃত হয়েছেন। আপনার কি কখনও মনে হয়নি এত কম জিপিএ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভব নয়? এবং আপনি বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করেছিলেন?
মো: মিজানুর রহমান: আমি অনার্সের পড়া শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরীতে পড়তাম। তখন দেখতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভাই বিসিএসের জন্য পড়ছে এবং ক্যাডারও হচ্ছে। মনে মনে ভাবতাম তাহলে আমি কি পারবো না! একে ঢাকা কলেজে ভূগোলে পড়েছি তার উপর আবার এসএসসির জিপিএ কম তাই মনে মনে ভাবতাম চেষ্টা করে ভাইভা পর্যন্ত গেলেও এসব কারণে বাদ পড়ে যাব। ৩০ তম বিসিএসে এসে দেখি আমার ভূগোলের এক ভাই পুলিশ ক্যাডার পেয়ে গেল। এরপরই ভাবলাম চেষ্টা করলে আমার পক্ষেও সম্ভব। এরপরই শুরু করলাম পাবলিক লাইব্রেরীতে আমার বিসিএস প্রস্তুতি। সেই ২০১২ সাল থেকে শুরু হল প্রস্তুতি। ৩৪ বিসিএস ভাইভা ফেল করলাম। ৩৫ লিখিত ফেল করলাম, ৩৬ এ এসে ক্যাডার হলাম আলহামদুলিল্লাহ। ৩৭ জেনারেল ক্যাডারে লিখিত দিলাম।
শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে ক্যাডারে সুপারিশকৃত হওয়া এ দীর্ঘ পথে কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে?
মো: মিজানুর রহমান: আমি শুধুই বিসিএসের জন্য পড়েছি। এজন্য বন্ধুদের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি হয়ে গেলেও আমাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এক পর্যায়ে বয়স ৩০ও পার হয়ে যায়। পড়ে গেলাম মহা টেনশনে। নানা প্রকার পারিবারিক, মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে। অনেকে অনেক কটু কথাও বলেছে। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে নিরবে সব সহ্য করেছি। এখন তারাই আবার বাহবা দিচ্ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তারা প্রায়শই হতাশা তথা একধরণের হীনমন্যতায় ভুগে, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি?
মো: মিজানুর রহমান: আমি মনে করি যেখানেই পড়ি না কেন সামর্থ্যের সবটুকু দিতে পারলে সফল হওয়া সম্ভব।মনে আত্মবিশ্বাস রাখতে আমি পারবো তাহলে সবকিছু সহজ হয়ে যাবে।
বার্তা কক্ষ
১৮ অক্টোবর,২০১৮