Home / সারাদেশ / ৩০ মণ মুলায় ১ কেজি ইলিশ, ৮ মণে ১ লিটার তেল!
মুলায়

৩০ মণ মুলায় ১ কেজি ইলিশ, ৮ মণে ১ লিটার তেল!

নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ে সবজির বাজারে ধস নেমেছে। পাইকারি বাজারে এক মণ মুলা (৪০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজির মূল্য দাঁড়াচ্ছে মাত্র ৫০ পয়সা। ফুল কপি, বাঁধা কপি ও বেগুনের দামও কম। সেই হিসেবে ৮ মণ মুলা বিক্রি করে কিনতে হচ্ছে ১ লিটার সয়াবিন তেল। আর ৩০ মণে ১ কেজি ইলিশ।

সবজির ভরা মৌসুমে দাম কমে যাওয়ায় অনেক চাষি কন্দাল জাতীয় ফসল মুলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মুলার বাজারে দাম কম হওয়ায় খেত থেকে সবজি তুলছেন না কৃষকরা। এজন্য খেতেই পচছে এ জাতীয় ফসল মুলা। ফলে খেতের সবজি খেতেই নষ্ট হচ্ছে।

সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের আরাজি পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, তার বাড়িতে মেয়ে ও জামাতা এসেছেন। তাই শখ করে বাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি ইলিশ কিনেছেন। এক কেজি ইলিশ কিনতে তাকে ৩০ মণ মুলা বিক্রি করতে হয়েছে। আর ১ লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন) কিনতে আট মণ মুলা বিক্রি করতে হচ্ছে।

বুধবার উপজেলার আরাজি পাইকপাড়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মণ মুলা তুলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে জমিতেই। মুলার জমিতে কৃষকরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন রবি মৌসুমের অন্য ফসল চাষের।

এ গ্রামের সবজি চাষি আবদুল লতিফ বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারো ঠাকুরগাঁও চিনি কলের জমি ভাড়া নিয়ে মোট ১৮ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছিলাম। কিন্তু খেত থেকে সবজি ওঠানোর সময় বাজারে দাম নেই। পাইকাররা এক টাকা কেজিতেও কিনছে না। মাঠের মুলা তুলতে যে শ্রমিক খরচ, তাও উঠছে না। তাই খেতে তুলে ফেলে দিচ্ছি। এবার প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হলো।

পাশের গ্রামের কৃষক হাবিবুর বলেন, মুলার তো দামে নাই! গম, সরিষা ও আলু আবাদের সময়ও ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই আলু ও ভুট্টা বীজ রোপণের জন্য বিনামূল্যে ব্যবসায়ীদের মুলা বিলিয়ে দিচ্ছি। তারা নিজ খরচে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ গ্রামের মুলা ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান, শুরুর দিকে কাঙ্ক্ষিত দাম পেলেও এখন মুলার বাজার বলতে নেই। গত এক মাস আগে ৩০-২৫ টাকা প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হয়েছিল। এখন হাটে প্রচুর মুলার আমদানি হয়েছে। তাই দাম কম। তাছাড়া বাজারে শীতকালীন সবজি ভরপুর। মুলার চাহিদা নেই।

হরিপুর উপজেলার আমগাঁও গ্রামের লাল মোহন রায় বলেন, মুলা শুরুতেই ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বর্তমানে মুলা কেনার লোক নেই। তাই খেতেই নষ্ট হচ্ছে মুলা।

একই গ্রামের কৃষক রইচউদ্দিন বলেন, মুলা তুলে করে কী করব! একজন শ্রমিকের মজুরি ৫শ টাকা, ভ্যান ভাড়া ২৫০ টাকা, আর এক বিঘা জমির মুলা বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৭শ টাকা। মুলা বেচে খরচই উঠছে না।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, পাঁচ উপজেলায় চলতি আবাদ মৌসুমে ৪ হাজার ৯৮৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কতটুকু জমিতে মুলা চাষ হয়েছে তা জানা না গেলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে মুলা চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ সময়ে বাজারে সব ধরনের সবজি চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকায় মুলার দাম পাচ্ছেন না কৃষক।

টাইমস ডেস্ক/ ৬ ডিসেম্বর ২০২৩