বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নাগরিকদের করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করেছে ইসরায়েল। শুক্রবার ষাটোর্ধ্বদের জন্য এই কার্যক্রম চালু করেছে তারা। তবে করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ প্রদানের অনুমোদন এখনও দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও।
শুক্রবার নিজে বয়োনটেক-ফাইজারের টিকার তৃতীয় ডোজ নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্তস্যোগ। এর ফলে যতো দ্রুত সম্ভব ইসরায়েল স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে বলে আশা করেন তিনি।
এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ৪৯ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। তিনি বলেন, ষাট বছর ও তার উপরের বয়সের মানুষদের তৃতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েল পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তিনি এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। বয়সের কারণে প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় ডোজ নিতে না পারলেও পেয়েছেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। গত জুলাইতেই অবশ্য গুরুতরভাবে রোগ প্রতিরোধহীন মানুষদের তৃতীয় ডোজ টিকার অনুমোদন দেয় ইসরায়েল।
তৃতীয় ডোজ: গবেষণা যা বলছে
ইসরায়েল সবার আগে তৃতীয় ডোজ টিকার অনুমোদন দিলেও এই বিষয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গ কোনো গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। এক্ষেত্রে তারা মূলত নির্ভর করছে বায়োনটেক-ফাইজারের তথ্যের উপরে। তাদের দাবি তৃতীয় ডোজ টিকা নিলে তা কভিডের ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে।
তবে ইসরায়েল সাধারণত যাদের অনুসরণ করে সেই যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এখনও বয়স্কদের তৃতীয় ডোজ করোনা টিকার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনুমোদন না দেওয়া সত্ত্বেও তৃতীয় ডোজ চালুর বিষয়ে জেরুসালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ হাগাই লেভিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এটা যুক্তিনির্ভর, মৌলিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নির্ভর নয়। কিন্ত তারপরও এই সিদ্ধান্ত ঠিক আছে।
জনগণের একটি বড় অংশকে টিকা দেওয়ার পর জুনে জনসমাগমসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ তুলে নেয় ইসরায়েল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণ বাড়ায় মাস্ক পরা আবারও বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা বলছে
করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ প্রদানের অনুমোদন এখনও দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও-ডাব্লিউএইচও। তাদের এখন মূল লক্ষ্য বিশ্বের সব দেশের জন্য পর্যাপ্ত টিকা নিশ্চিত করা। বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দরিদ্র্য দেশগুলোতে টিকা সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।
এমন অবস্থায় ইসরায়েলের তৃতীয় ডোজ টিকা চালুর খবরে শুক্রবার ডাব্লিউএইচও এর মুখপাত্র ব্রুস আইওয়ার্ড সাংবাদিকদের বলেন, টিকা সরবরাহকারী, উৎপাদনকারী দেশ বা যেসব দেশ টিকা দিয়ে ফেলেছে তাদের এখন উচিত সব দেশের জনসংখ্যার অন্তত দশ শতাংশকে টিকাদানে সহায়তা করা। এই মহামারি থেকে বের হওয়ার জন্য এটাই সবচেয়ে জরুরি।
উল্লেখ্য, শুরুর দিকেই পর্যাপ্ত টিকা নিশ্চিত করায় এবং উন্নত ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার কারণে দ্রুত গতিতে নাগরিকদের করেনার টিকা দিতে পেরেছে ইসরায়েল। দেশটির ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৫৫ শতাংশই এরই মধ্যে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, যার বেশিরভাগই বায়োনটেক-ফাইজার কম্পানির। তবে বয়সের বিচারে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও দশ লাখ মানুষ টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
গত মাসে দেশটির সরকার ১২ বছরের উপরে সবাইকে টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। চলতি সপ্তাহে আরেক ঘোষণায় বলা হয়েছে, যারা পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী এবং গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ১ আগস্ট থেকে তাদেরকেও টিকা দেওয়া যাবে। (সূত্র: ডয়চে ভেলে।)
আন্তজার্তিক ডেস্ক, ৩১ জুলাই, ২০২১;