আগামী নির্বাচনের সময় দেশের বাইরে থাকতে চান সরকারের অন্তত দুই শতাধিক কর্মকর্তা। ওই সময়টায় ছুটি চেয়ে ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন এসব কর্মকর্তা। কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এ মুহূর্তে দেশের বাইরে কোনো মন্ত্রণালয়ের খুব জরুরি কোনো কাজ না থাকলে কাউকে ছুটি দেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান খুব কঠোর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি মাসেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই মাসের শেষ দিকেই ছোট আকারে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আর এই নির্বাচনের আগ মুহূর্তেই সরকারের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব এমনকি সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মিলিয়ে দুই শতাধিক আমলা ছুটির আবেদন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এই সময়টায় তারা থাকতে চান দেশের বাইরে। নির্বাচনের পর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে তারা দেশে ফিরতে চান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের এসব আমলা নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। তাই তারা অসুস্থতা এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের অজুহাত দেখিয়ে বিদেশে যেতে চেয়ে ছুটির আবেদন করেছেন। তাদের বেশিরভাগই আবেদন করেছেন লম্বা সময়ের জন্য ছুটি চেয়ে। একটি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা একটি টিমের নেতৃত্ব দিয়ে সম্প্রতি এক সপ্তাহের জন্য দেশের বাইরে গেছেন।
তিনি বলেন, একটি দেশ তাদের কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য তাকে এবং তার টিমকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টিম নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার ছুটি মঞ্জুর করতে তাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত দুই শতাধিক কর্মকর্তা নানা অজুহাত দেখিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। এ কারণে তাকে এবং টিমকে ছুটি দেওয়া হচ্ছিল না।
শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রণকারী দেশের সহযোগিতায় তারা যেতে পেরেছেন। সরকারের একজন সচিব বলেন, ‘অসুস্থতাসহ নানা অজুহাতে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য বহু সংখ্যক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন বলে জানতে পেরেছেন। তবে এসব ছুটি কোনোভাবেই মঞ্জুর করা হবে না বলে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান খুবই কঠোর।’
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১০ বছরের শাসনামলে সরকারের আমলারা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। বেতন ভাতা বাড়ানো থেকে শুরু করে পদ না থাকার পরও দফায় দফায় পদোন্নতি, বাড়ি-গাড়ির জন্য ব্যাংক ঋণ সুবিধাসহ নানা রকম সুবিধা নিয়েছেন। পদ না থাকলেও উপ-সচিব থেকে যুগ্ম-সচিব, যুগ্ম-সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়েছেন বহু আমলা।
অথচ এখন নির্বাচনের আগমুহূর্তে সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তার অনেকেই ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করেছেন। সরকারের একজন মন্ত্রীর একান্ত সচিব বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগেও এরকম অনেক কর্মকর্তা দেশের বাইরে থাকার জন্য ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ও তাদের ছুটি দেওয়া হয়নি। এবারও সুবিধাবাদী কর্মকর্তারা ছুটির আবেদন করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। সরকারের কাছ থেকে সব সুবিধা নিয়ে নির্বাচনের আগে ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে জানতে গত রাতে একাধিকবার জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।(বিডি প্রতিদিন)
বার্তা কক্ষ
১০ অক্টোবর,২০১৮