Home / সারাদেশ / ২৬ দিনেই বিধবা হলেন স্মৃতি
marrige

২৬ দিনেই বিধবা হলেন স্মৃতি

গত ২৮ জানুয়ারি ধুমধাম করে মেয়ে আফরুজা সুলতানা স্মৃতির (২৪) বিয়ে দেন বাবা মো. আবুল খায়ের। ভালোই চলছিল মেয়ের নতুন সংসার। কিন্তু বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের আচমকা আগুনে জামাতা মাহবুর রহমান রাজু ও তার ছোট ভাই মাসুদ রানা পুড়ে অঙ্গার হয়।

রাজুর শ্বশুর আবুল খায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘এই ছিল কপালে! কতো আয়োজন করে বন্ধু সাহেব উল্লাহর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস মাস না যেতেই মা (মেয়ে) আমার বিধবা হলো। ওর সামনে আমি কি করে দাঁড়াবো।’

চকবাজারেই কাপড়ের ব্যবসা করেন তিনি। দেখে শুনেই মেয়েকে রাজুর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আগুনের খবর মোবাইলে পেয়ে ছুটে আসি। কিন্তু দোকানের কাছেই যেতে পারিনি। পরে শুনেছি ওরা আগুনের ভয়ে দোকানেরর সাটার বন্ধ করে দিয়েছিল। আর বের হতে পারেনি। ওখানেই ওরা…!

আবুল খায়ের বলেন, আগুন লাগার আধাঘণ্টা আগেও রাজুর মা দেখা করে গেছে। বেহাই (রাজুর বাবা) টাকা নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিত এসব বিষয় খেয়াল রাখা। যেখানে সেখানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটবে আর মারা যাবে সাধারণ মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা। সিলিন্ডার ব্যবসা বন্ধ করা উচিত, কড়া নজরদারিতে রাখা উচিত আগুন বোমা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজুরা তিন ভাই। রানা টেলিকম নামে তাদের দোকান ছিল। সেখানে ফোন-ফ্যক্সসহ মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ বিক্রি করতো তারা। ছোট্ট ভাইকে নিয়ে বাবা মাসহ ঢাকাতেই চুরি হাট্টার পাশের একটা ভবনে থাকতো।

রানা রাজুর বাবা সাহেব উল্লাহর বন্ধু নিজাম উদ্দিন ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্নাকাটি করে বলছিলেন, নিজের ছেলের মতো ওদের ভালবাসি। কতো স্মৃতি ওদের সঙ্গে। পরিশ্রমী ছেলে দুটা এভাবে মারা যাবে ভাবতে পারছি না। বন্ধু আমার ব্যবসা করতো এখন বয়স হয়েছে। রানা রাজুই ছিল উপার্জনক্ষম। ছেলে দুটা মরে যাওয়ায় বন্ধুর বেঁচে থাকার মেরুদণ্ডই ভেঙে গেলো।

রাজুর মরদেহের সিরিয়াল ৪০, রানার ১২। মরদেহ নিয়ে গ্রামেরবাড়ি যাবো। সেখানেই দাফন হবে।

রাজুদের দোকানের পাশেই একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তাহমিনা বেগম। তিনিও খোঁজ নিতে এসে বলেন, নিয়মিত ওদের দোকানে ফ্লেক্সি দিতাম, কেনাকাটা করতাম। আগুনে নিজের বোন তানজিলাও দগ্ধ হন। তবে এখন সুস্থ। বোনকে বাসায় রেখে তাদের দুইভাইকে শেষবারের মতো দেখতে এসেছি।

জার্সি দেখে ছেলেকে চিনলেন মা

‘ও ভাই আমাকে মাটি দিবা না। আমারে ছাড়িয়া কই গেলা। ও ভাইরে তোরে আর দেখতে পাব না। ও ভাই তুমি কই গেলা। আমি ভাইরে দেখমু। আমারে ভাইয়ের কাছে নিয়া যাও।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের সামনে নাতির (মেয়ের ছেলে) জন্য এভাবেই আহাজারি করছিলেন ৯০ বছরের বৃদ্ধা মমতাজ বেগম।

বুধবার পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন মমতাজ বেগমের নাতি নয়ন। যার মৃতদেহ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে।

মর্গের সামনে বৃদ্ধা মমতাজ বেগমের সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে ও নয়নের মা কোহিনুর বেগম। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নয়নের দুই বোন।

নয়নের মা কোহিনুর বেগম বলেন, নয়ন চকবাজারের একটি দোকানে কাজ করত। প্রতি মাসে বেতন পেত ৬ হাজার টাকা এবং প্রতিদিন ১০০ টাকা করে পেত। এ টাকা দিয়েই চলতো তাদের সংসার।

তিনি বলেন, নয়ন ফুটবল খেলতে ভালোবাসতো। আজ ওদের ফুটবল খেলা ছিল। নয়নের গায়ে সেই ফুটবলের জার্সি ছিল। জার্সিতে নয়নের নাম লেখা রয়েছে। এই নাম লেখা দেখেই তারা মেডিকেলে নয়নের লাশ চিনতে পেরেছেন।

নয়নের মৃত্যুর খবর কীভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নয়নের এক বোন বলেন, আমরা দোকান মালিককে ফোন দিলে তিনি বলেছিলেন সাড়ে দশটায় দোকান বন্ধ করে ভাইয়া বের হয়ে গেছেন।

‘কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাইয়াকে না দেখতে পেয়ে আম্মাকে বলি ভাইয়া বাসায় ফেরেনি। তখনও আমরা জানি না চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরপর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানতে পেরে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসি। এখানে এসে ভাইয়ার গায়ের জার্সি দেখে আমরা ভাইয়াকে চিনতে পেরেছি’ বলেন নয়নের ওই বোন।

নয়নের বাবা কী করেন জানতে চাইলে নয়নের নানি মমতাজ বেগম বলেন, ওর বাবার নাম নেবেন না। ওর কোনো বাবা নেই। ওরা চার বোন এক ভাই, আর ওদের মা ছাড়া কেউ নেই। এ সময় পাশ থেকে একজন বলেন নয়নের বাবা ওদের সঙ্গে থাকেন না। (জাগো নিউজ)

২১ ফেব্রুয়ারি,২০১৯