গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় এসিডদগ্ধ সুমির পাশে দাঁড়ালেন ব্র্যাকের মানবাধিকার কর্মসূচি। আইনী ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিলেন সংগঠনটির মতলব শাখা।
ব্র্যাক মানবাধিকার ফিল্ড অর্গানাইজার পারভীন আক্তার রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি চাঁদপুর টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘গত ২৪ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক সিইপি’র মতলব শাখার ফিল্ড অর্গানাইজার মোঃ তছলিম আহম্মেদ সহ আশ্বিনপুর এসিডদগ্ধ সুমির বাড়িতে যান। সেখানে সুমির সার্বিক খোঁজখবর নেন।
পারভীন আক্তার আরও জানান, ‘এসিডদগ্ধ সুমির সার্বিক বিষয় সম্পর্কে স্বচিত্র প্রতিবেদন ব্র্যাক মানবাধিকার প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ মাস পূর্বে কতিপয় বখাটেদের ছোড়া এসিডে ঝলসে যাওয়া সুমি আক্তার (২৫) চিকিৎসার অভাবে বাড়ির বিছানায় কাতরাচ্ছেন। বর্তমানে দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে তার পরিবার।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন মাসে ৬ লক্ষাধিক টাকা ব্যায় করার পর অর্থের অভাবে চিকিৎসা শেষ না করেই বাড়িতে নিয়ে আসে।
বর্তমানে তার পরিবার সুমির উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এ ঘটনায় সুমির পিতা ইসমাইল বৈদ্য বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
ওই মামলায় আবু সাঈদ বৈদ্য মাস্টারকে প্রধান আসামী করে আরও একই গ্রামের মোশারফ মেম্বারের ছেলে লোকমান হোসেন বৈদ্য (৩৫), মতিন বৈদ্যের ছেলে ইকবাল হোসেন ওরফে টাইগার ইকবাল (২০)সুন্দর সরকার মুক্তারের ছেলে রেজাউল করিম (২৫) ও মজিবুর রহমান বৈদ্যের ছেলে আব্দুর রহিম বৈদ্য (৩৫) কে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ২৮ আগস্ট চাঁদপুর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতলব দক্ষিণ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে প্রশিক্ষণে থাকায় আসামীদের ক’জন জেলে কিংবা পলাতক রয়েছেন তার তথ্য জানা যায়নি। বাদিপক্ষ দাবি করেছেন আসামীদের মাত্র দু’জন জেলে রয়েছে।
পূর্বের ঘটনাসূত্রে জানা যায়, ইসমাইল বৈদ্যের মেয়ে সুমিকে দীর্ঘদিন যাবৎ উত্ত্যক্ত ও অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল আবু সাঈদ বৈদ্য। এতে সম্মত না হওয়ায় গত ৭ এপ্রিল রাত আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় ঘরের সিঁধ কেটে ভিতরে প্রবেশ করে প্রথমে সুমির ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল সেট নিয়ে নেয়। পরে ঘুমন্ত অবস্থায় সুমিকে লক্ষ করে এসিড নিক্ষেপ করে। এতে তার মুখমন্ডসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়।
তার ডাকচিৎকার শুনে তার বাবা-মা ও বাড়ির প্রতিবেশি মোজাম্মেল ও সিরাজ এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে নারায়ণপুর স্কয়ার হাসপালালে নিয়ে আসলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমির অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে তাকে গৌরিপুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সুমি আক্তারকে চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। বাড়ির বসত ভিটা ছাড়া সবকিছুই বিক্রি করে চিকিৎসার কাজে ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমানে সুমির দুটি চোখের অবস্থা খুবই শংকটাপন্ন। চিকিৎসার অভাবে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে তার পরিবার।
তার অপারেশনের জন্য প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হবে বলে চিকিৎসকরা ধারণা দিয়েছে। তাই অর্থের অভাবে সুমি এখন বাড়ির বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদনটি দেখুন…….বিছানায় কাতরাচ্ছেন মতলবের এসিডদগ্ধ সুমি : চোখ হারানোর আশংকা
মতলব দক্ষিণ করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:০০ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ