দেশের পেঁয়াজ বাজার অস্থিতিশীল প্রায় মাস দুই ধরে। এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় দাম বেড়েছে নিত্যদিনের অতিপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির। সর্বশেষ ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে দেশের কোথাও কোথাও এর চেয়েও বেশি দাম বিক্রি হয়েছে (খবর বাংলানিউজ)।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেঁয়াজ সংকট কাটাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। দ্রুত সময়ে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ায় কমতে থাকে দাম। ২৭০ টাকা থেকে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমে আসে পেঁয়াজের দর।
কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতে ফের তা বেড়ে ২৫০ টাকা হয়। তবে বেশকিছু দিন ধরে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে পেঁয়াজ বাজার। এতে করে সরকারের পেঁয়াজ আমদানি, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা ঘোষণায় কোনো সুফলই দেখছেন না সাধারণ ক্রেতারা। বরং ক্রেতারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজারদর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের শতভাগ ব্যর্থতায়।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট বাজার, কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, আমদানি করা বিভিন্ন বার্মা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে, মিশর ২০০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, গাছসহ পেঁয়াজ (পেঁয়াজের কালি) বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।
দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরাতে প্রভাব পড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজ থাকলেও অতি মুনাফার আশায় দাম কমাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
মালিবাগ বাজারের হাসিনা নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। ব্যবসায়ীরা একের পর এক দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন অথচ বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
হাসান নামে কাঁঠালবাগান বাজারের এক ক্রেতা বলেন, এখন কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে আর কমে না। দেশে এখন ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে শক্তিশালী, তারা সব কিছুর মূল্য ঠিক করে দেয়।
রামপুরা বাজারের আল-আমিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা শফিকুল জানান, এখন পাইকারি বাজারে দাম অনেক বেশি, তাই খুচরাতে প্রভাব আছে। তবে দাম বেশি না পাইকারি বাজার থেকে সামান্য বেশি রেখে পণ্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত এলে দাম কমবে।
শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা টিটন রায় বলেন, আমদানি না থাকায় পেঁয়াজের দাম বেশি। এর আগে ভারতের পেঁয়াজ সরবরাহ বেশি ছিলো তাই দাম কম ছিলে, এখন সেটা নেই। তাছাড়া বিমানযোগে আসা পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম বেশি। তবে আমদানি বেশি হলে দাম কমবে।
অন্যদিকে পেঁয়াজ বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় অব্যাহত রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খোলা বাজারে ট্রাকসেলে পেঁয়াজ বিক্রি। দীর্ঘ সময় ধরে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে অনেককে। ভিড় থাকায় বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন একেকটি ট্রাকযোগে এক হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিক্রি অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বার্তা কক্ষ,২৯ নভেম্বর ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur