Home / সারাদেশ / ২৩ মাসে ৩১২ জনের আত্মহত্যা!
Sucide
প্রতীকী ছবি

২৩ মাসে ৩১২ জনের আত্মহত্যা!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও শহরের কলেজ পাড়ার তরুণী প্রত্যাশার সঙ্গে গোয়াল পাড়া এলাকার তন্ময় তানজিম নামে এক তরুণের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কে টানাপড়নের জের ধরে গত ২৯ জুলাই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘সব বলা হয়তো শেষ হয় না। অবশেষে শেষ নিঃশ্বাস (কেউ কমেন্ট করবেন না প্লিজ)।’ জানা যায়, ওই দিনই ঘুমের ওষুধ খেয়ে চিরঘুমে তলিয়ে যায় প্রত্যাশার জীবন। এর কয়েক দিন পর একইভাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তরুণ তন্ময় তানজিম। তিনি লিখেন, ‘আমি তোমাকে অনেক মিস করছি, তুমি জানতে আমি একটু পাগল টাইপের, তুমি তো মানিয়ে নিতে পারতে। তোমার নাম্বারটাও আমি রাগ করে ডিলিট করে দেই, কিন্তু আমি সত্যি তোমাকে অনেক মিস করছি।’

সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনের একটি কক্ষের ভেতরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন আর্মড এসআই নজলার রহমান। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে জানা যায়, পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। ঠিক এভাবেই ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিদিন কেউ না কেউ আত্মহত্যা করছেন। কেউ গলায় ফাঁস দিয়ে, কেউ বিষপান করে অথবা কেউ ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করছেন। আত্মহত্যার কারণে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ।

স¤প্রতি ঠাকুরগাঁয়ে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। জেলা প্রশাসনের ধারণা মতে, গড়ে দৈনিক দু’জন করে আত্মহত্যা করেন এ জেলায়। ফলে দেশের সবচেয়ে আত্মহত্যা শংকুল জেলা হিসেবে ঠাকুরগাঁও প্রথমে অবস্থান করছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন থেকে স্থানীয়রা।

পুলিশের খাতার তথ্যমতে, গত ২৩ মাসেই এ জেলায় আত্মহত্যা করেছেন ৩১২ জন। এদের অধিকাংশই ১৮ থেকে ২৫ বছরের তরুণ-তরুণী। বাদ যাচ্ছে না গৃহবধূ, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, মাদকাসক্ত তরুণ, চাকুরিজীবী, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তবে এত আত্মহত্যার মধ্যেও সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের নেই দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ, কাজ করছে না কোনো বেসরকারি সংস্থাও।

আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, প্রেমে ব্যর্থ, অভিমান, আর্থিক অনটন, পারিবারিক কলহ, মাদকাসক্তি ও তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারসহ নানা কারণেই মানুষ আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে।

তারা বলছেন, পারিবারিক সচেতনতার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যথাযথ কাউন্সিলিংয়ের অভাবে এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তাছাড়া সুস্থ্য বিনোদনের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা আসলেই উদ্বেগজনক। আত্মহত্যা কেমন করে রোধ করা যায় সে বিষয়ে আমরা একটি গবেষণা করছি। আমাদের গবেষণা প্রায় শেষের দিকে। খুব শিগগিরই ঢাকা থেকে একজন মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানী নিয়ে এসে আমরা ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সেমিনার করব। আশা করি ঠাকুরগাঁওয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে যাবে।

পুলিশের তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি ঠিক নয়, এগুলো ইউডি মামলা ভুক্ত আত্মহত্যার পরিসংখ্যান।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬:২০ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার
এএস