আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের বাহিরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা জানালেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলটি। দলের নেতারা বলছেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের এ নির্বাচনে ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ২’শ টিতেই বিজয়ী হবে বিএনপি।
তবে বিভিন্ন পৌরসভায় নির্বাচনের বাহিরে রাখার জন্য তাদের প্রার্থীদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, অনেক স্থানেই তাদের প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি। যারা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন তাদেরকেও বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।
এ বিষয়ে স্বয়ং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিগত আন্দোলনে পঙ্গু হওয়া ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে দেখা করার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৌর নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। লোক দেখানো নির্বাচন এটি। আমাদের প্রার্থীদের নমিনেশন পর্যন্ত জমা দিতে দেওয়া হয়নি। তারা পৌর নির্বাচনে চোরামি করে জনপ্রিয়তা দেখাতে চায়।’
নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও অনুষ্ঠিত হওয়া শেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মত মাঝ পথ থেকে যাওয়ার বিষয়ে এখনই চিন্তা করছে না দলটি। তবে দলের অধিকাংশ নেতাই জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়েই ভাবছে বিএনপি। বর্জনের কথা উড়িয়ে দেন তারা।
নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে অধিকাংশ পৌরসভায়ই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হবে বলে দাবি করছে দলটির নেতারা। বিএনপি নেতাদের দাবি, জনগণ বিএনপির সাথেই আছে এবং বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদেরকেই ভোট দিবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব:) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বেশকিছু পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হবে। কারণ, মাঠে বিএনপির জনপ্রিয়তা আছে। এখন কথা হচ্ছে, নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ হয়, প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।’
নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের সংশয় আছে। নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে।’
বিএনপির মতে নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মত সরে দাঁড়াবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। এটা সময়ই বলে দিবে।’
অন্যদিকে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বলেন, ‘যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপি ভাল করবে। কত সিট পাবে সেটা এখনতো আর বলা যাবে না কিন্তু ভালই করবে।’
সিটি নির্বাচনের মত নির্বাচনের দিন দল সরে দাঁড়াবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্তই লড়াই করে যাবো। আমরা নির্বাচনের শেষ পর্যন্তই থাকবো।’
অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি অধিকাংশ পৌরসভায় জয়লাভ করবে।’
বরাবরই দেশে গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার নেই বলে অভিযোগ করে আসছিলো একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা এ দলটি। পৌরসভা নির্বাচনকে দেশের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, এ নির্বাচন বিএনপির কাছে গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে গিয়েছি গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের আন্দোলন মনে করে। তবে আমরা এখনও শতভাগ শঙ্কিত যে, ৫ই জানুয়ারি বা উপজেলার তৃতীয় থেকে ষষ্ট অথবা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মত প্রহসন হয় কি না।’
তিনি বলেন, ‘শুরুতেই আমাদের অনেক জায়গায় মনোনয়ন পত্র জমা দিতে দেয়া হয়নাই। মনোনয়ন পত্র অনেক বাতিল করা হয়েছে। শুরুতেই যে প্রহসন শুরু হয়েছে তাতে করে আমরা শঙ্কিত। বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থাটাকেই যেভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে তারই অংশ করবে কিনা সরকার সেটা নিয়েই আমরা শঙ্কিত।’
তিনি বলেন, ‘যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপি ২৩৪টির মধ্যে অন্তত ২০০ টি জেতার ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ, বিএনপি মনে করে এ মুহুর্তে জনগণ একটি জাতীয় সংসদের নির্বাচনের জন্য ক্ষুদার্ত। এ নির্বাচনের জন্য জনগণও প্রস্তুত নয়। তারপরেও নির্বাচনটা যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে জনগণ ধানের শীষে ভোট দিবে এবং বিএনপি ২’শ আসন পাবে।’
কারচুপির অভিযোগ এনে সিটি নির্বাচনের মত পৌর নির্বাচন বিএনপি বর্জন কিনা?-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন বর্জন করার কোন পরিকল্পনা নেই। এই নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন হিসেবে। আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি এবং নির্বাচনে শেষ পর্যন্তই থাকতে চাই।’
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৬:০৬ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫, শুক্রবার
এমআরআর