চাঁদপুর

২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার হচ্ছে চান্দ্রা-মুন্সীরহাট ওয়াপদা

চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন চান্দ্রা-মুন্সীরহাট সড়কে সংস্কার শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরনো অচল রাস্তাটি ভেঙ্গে তা প্রশস্ত করা হয়েছে। সেখানে নতুন পাকা সড়ক নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।

বর্তমানে নির্মাণাধীন কাঁচা রাস্তাটিই মানুষের মনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। অবস্থাটা এমন যে, বর্তমানে উন্নত ও মসৃন কাঁচা সড়কটি পেয়েই মহাখুশি যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। এ যেন উত্তপ্ত মরুভূমিতে এক পশলা শীতল বৃষ্টির পরশ। সড়কটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে চাঁদপুরের সাথে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার মধ্যে উন্নত ও সহজ যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে।

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী চৌরাস্তা থেকে ফরিদগঞ্জের গল্লাক পর্যন্ত ১২.৬৭০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও পুনঃনির্মাণ কাজ চলছে।

এতে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে মাটির কাজ বাবদ ব্যয় হবে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সড়কটির পিচ ভেঙ্গে রাস্তা পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার কথা। ২০১৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত এই কাজটির জন্য ঠিকাদারের দায়-দায়িত্ব (লাইবিলিটি) থাকবে।

বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই অত্যন্ত মানসম্পœভাবে কাজ চলায় এলাকার সুবিধাভোগী মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও সওজ কর্তৃপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের সকলের আশাবাদ, এভাবেই যেন মানসম্মতভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ হয়।

প্রকল্প এলাকার জনপ্রতিনিধি, সচেতন মহল ও স্থানীয় লোকজন জানান, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অত্যন্ত করুন অবস্থা ছিল সড়কটির। এ নিয়ে সাংবাদিকরা জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়কটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল।

এ অঞ্চলের মানুষের দাবি ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়কটি পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা করেন। এই প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে এমন এক সময়ে জনগণ সড়কটির সুবিধা পাবে যখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। অত্যাধুনিক এই সড়কটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জে ভোটের রাজনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, টেন্ডার সিডিউল অনুযায়ী কাজটি করা হচ্ছে। সওজ প্রকৌশলীরা নিয়মিত কাজ পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করছেন। সম্পূর্ণ নিয়ম-নীতি মেনে আমরা কাজ করছি। কাজটি ভালোভাবে করতে ও এলাকার মানুষের উপকারের স্বার্থে সিডিউলে নেই এমন কিছু কাজও আমরা নিজে থেকে করেছি। কাজ শুরুর আগে আমাদের মালামাল পরিবহনের স্বার্থে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে গর্ত ভরাট করে ব্যাপক সংস্কার কাজ করেছি নিজেদের অর্থে। এই কাজ সিডিউলে ছিল না, এর জন্য কোনো বাড়তি অর্থও আমরা পাবো না। এই বাড়তি কাজের কারণেও যানবাহন চালক ও যাত্রীরা অনেক উপকৃত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহনে লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে। মূলত এই সড়কের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার সাথে চাঁদপুর জেলার যোগসূত্র হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী ছিল। গত একবছর ধরে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচলও দুস্কর ছিল। বর্তমানে রাস্তার কাজটি অনেক ভালোভাবে চলছে। এ রকম ভালোভাবে রাস্তার কাজ আগে-পরে কেউ করেনি। তাদের দাবি, দ্রুত পাকাকরণ কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হোক।

চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বিল্লাল বলেন, স্থানীয় সাংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রাস্তার কাজের জন্যে অর্থ বরাদ্দ দেন। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে বর্তমানে কাজ চলছে। আমরা যা খবর পেয়েছি, তারা যথাসময়ে কাজ শেষ করার জন্যে চেষ্টা করছেন। আমাদের দাবি থাকবে যেহেতু এটি একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এর মাধ্যমে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর জেলার মানুষের সেতুবন্ধন হবে। তাই কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ থাকবে, জনগণের স্বার্থে দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করা হোক।

চাঁদপুর জেলা পরিষদেও নির্বাচিত সদস্য (সদর-ফরিদগঞ্জ) রফিক তালুকদার বলেন, বর্তমানের ইট-পাথর-বালির রাস্তাটি পেয়েই ফরিদগঞ্জের মানুষ মহাখুশি। আগে যেখানে একতা বাজার থেকে বাগাদী চৌরাস্তা পর্যন্ত গাড়িতে আসতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগতো এখন সেখানে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। কাজের মান অত্যন্ত উন্নত ও ভালো। আমার বিশ্বাস, এটি ফরিদগঞ্জের প্রধান ও শ্রেষ্ঠ সড়ক হবে। কিছু অসাধু লোক রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এত ভালো কাজ নিয়েও অপপ্রচার করছে। এটা দুঃখজনক। আমি সমালোচকদের বলবো, আপনারা বাস্তবে এসে কাজ দেখুন। তারপর প্রয়োজন মনে করলে সমালোচনা করুন।

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত বলেন, অধিকতর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের কাজ পেয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী উল্লেখিত প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। শতভাগ মানসম্মতভাবে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি এটি চাঁদপুর জেলার শ্রেষ্ঠ সড়ক হবে। আমার চাকুরি জীবনে এত ভালো কাজ আর কখনো দেখিনি। যে গতিতে কাজ চলছে আশা করি নির্ধারিত সময়ের ৬/৭ মাস আগেই কাজ শেষ হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বৃষ্টির কারণে চলমান কাজের কিছু কিছু এলাকায় মাটি ধ্বসে পড়ছে। এতে মূলত উপকার হচ্ছে। ধ্বসে যাওয়া স্থানগুলো ভালোভাবে মেরামত করা যাচ্ছে। আশা করি, এতে সড়কটি টেকসই হবে। ঠিকাদারকে যতবার বলছি ততবার’ই তারা রিপেয়ারিং করে দিচ্ছে।

এ সংক্রান্ত  আগের প্রতিবেদন-

চান্দ্রা-মুন্সীরহাট ওয়াপদা’ সড়ক পুনঃনির্মাণ কাজ উদ্বোধন

করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৫০ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Share