Home / বিশেষ সংবাদ / ‘একা টাকাও হারাম খাবো না’ ঘোষণার ২০ দিনের মাথায় বদলি
বদলি

‘একা টাকাও হারাম খাবো না’ ঘোষণার ২০ দিনের মাথায় বদলি

‘একা টাকাও হারাম খাবো না’ ঘোষণা দেয়ার ২০ দিনের মাথায় সুনামগঞ্জ থেকে বদলি করা হয়েছে সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে। ২৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়।

তবে এ ঘোষণায় তাকে বদলি করা হয়েছে কিনা তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. শামছুউদ্দিনকে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে সদ্য বদলিকৃত ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

এ মাসের প্রথম দিকে সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ পান ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোল। সুনামগঞ্জে যোগ দিয়েই স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের ঘোষণা দেন। স্বাস্থ্য খাতে নানা উন্নয়নেরও উদ্যোগ নেন তিনি। তার হঠাৎ করে বদলিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জে।

ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোল বদলির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগ দিয়ে ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘বাবার টিউশনির টাকায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছি। আমি হারাম এক টাকা খাব না, কেউ খাওয়াতেও পারবে না। আর কেউ আমার অধীনে থেকে অনিয়ম করে খেতেও পারবে না। কারণ এই শিক্ষা আমার পরিবার থেকে আমি পাইনি।’

এর আগে তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এ চিকিৎসক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘নিজের অবস্থান, পারিবারিক নীতি-নৈতিকতার দায়বদ্ধতা থেকেই এখানে সৎভাবে কাজ করতে এসেছি। আমাকে সরকার যে বেতন দেয়, তা দিয়েই সংসার চালাই। আমি যদি দুর্নীতি করি তাহলে কলঙ্কের দাগটা আমার বাবা ও পরিবারের ওপর লাগবে। আমি কখনোই কাউকে সেই কাজ করতে দেব না। আমি নিজেও দুর্নীতি করব না, সেসব কাজ থেকেও বিরত থাকব যেগুলো আমাকে কলঙ্কের দাগ লাগাবে।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেই এমবিবিএস পাস করেছেন তউহীদ আহমদ কল্লোল। পরে ২১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল বলেন, আমার বাবা উপসচিব ছিলেন। এরপরও তিনি টিউশনি করেছেন। কষ্ট করে আমাকে পড়িয়েছেন। মানুষের মতো মানুষ করেছেন। সুনামগঞ্জ হাসপাতালের একটি দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বে থাকার কারণে এর আমার কিছু ধারণা রয়েছে। এ ধারণার আলোকে সুনামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানো, সুন্দরভাবে সাজানোর পাশাপাশি দুর্নীতি বন্ধে কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা কম, আশপাশে ময়লা-আবর্জনায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমি এসব দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করারসহ সব সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধামে কাজ শুরু করেছি। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলাসহ সবাইকে নিয়মের মধ্যে অফিসে আসছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখব।

নিজ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল আরো বলেছিলেন, হাসপাতালের সমস্যাগুলো সমাধানে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি তিনভাগে ভাগ করে নিয়েছি। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে। এরপর মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা এবং পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করব। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। পরামর্শ দিলে জনস্বার্থে আমি তা গ্রহন করব। কারণ অনেক সময় অনেক কিছু চোখের আড়ালে হয়ে যায়। তাই এসব কাজে আপনাদের সহযোগীতা আমার খুব প্রয়োজন।

দালামুক্ত হাসপাতার গড়তে তিনি বলেছিলেন, কে চিকিৎসক, কে নার্স, কে কর্মকর্তা এবং কে কর্মচারী সবার পোশাক নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আর সবাইকে নিজ নিজ নেমপ্লেট ব্যবহার করতে হবে। এতেই প্রমাণিত হবে কারা হাসপাতালের দালাল। সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য টাকা দেবে, আর তা মেরে খাবে- আমি এসব সহ্য করব না। আমি শুধু দেখব কেউ আমার হাসপাতালের খাত থেকে দুর্নীতি করে কত টাকা নয়-ছয় করেছেন। সেটি অবশ্যই দেখব আমি। এটা সবার ক্ষেত্রেই দেখব। সব কিছুর হিসাব নেব। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

বার্তা কক্ষ, ২৯ জানুয়ারি ২০২০