Home / জাতীয় / ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে উন্নত রাষ্ট্র
PM3

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে উন্নত রাষ্ট্র

‎Saturday, ‎May ‎09, ‎2015  7:31:56 PM

গাজীপুর প্রতিনিধি :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো। কিন্তু, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর সালনায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র বিমোচন, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু কৃষি আজ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ হেক্টর কৃষি জমি অকৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য যোগান দেয়া সহজ কাজ নয়। শুধু খাদ্য কেন, অন্যান্য মৌলিক চাহিদা যেমন বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার উপকরণও কৃষি জমি থেকে আসে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার উপকরণের চাহিদা মেটাতে হলে আমাদের উন্নত প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সেগুলো কৃষকের মাঝে হস্তান্তর, উপকরণ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে কৃষিকে একটি লাভজনক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ একটি সোনার বাংলা গড়তে কৃষি শিক্ষায় মেধাবি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য তিনি কৃষিবিদদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেল (এমপি), সিন্ডিকেট সদস্য কৃষিবিদ আবদুল মান্নান (এমপি), কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হল, কৃষি অনুষদ ভবন, ফিশারিজ ভবন, ভেটোরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদ ভবন ও বেগম সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়াম উদ্বোধন করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রফেসর ড. এল. এম. আইজ গ্রুবার গ্রাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদ ভবন, প্রফেসর ড. ইয়োশিও ইয়াদামা লাইব্রেরি ভবন, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হল, ইলা মিত্র হল ও কৃষিবিদ ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা বহিরাঙ্গন কেন্দ্রের নাম ফলক উন্মোচন করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার সেই দূরদৃষ্টির ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা ২৬ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য ঘাটতির দেশকে ৪০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছিলাম। এজন্য জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আমাদের সেরেস পদকে ভূষিত করে। আমাদের আগে বিএনপি সরকার দাবিতে আন্দোলনরত ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল। ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে আমরা কৃষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সার সরবরাহ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কৃষিবান্ধব নীতির ফলেই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে রেকর্ড ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্ট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, বরং বাংলাদেশ আজ খাদ্য রফতানিকারক দেশ। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা সারের দাম তিন দফা কমিয়েছি। কৃষকের জন্য মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। সার, সেচ ও ডিজেলসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। ডিজেলের ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হয়েছে। আমরা প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ প্রদান করছি এবং কৃষি গবেষণায় জোর দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি যে, দেশের যে কোন ধরনের রাজনৈতিক বা অনুরূপ অস্থিরতা একদিনের জন্যও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারেনি।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা গবেষণার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এবং সেগুলির সম্প্রসারণ করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। এসবের মধ্যে মঙ্গাপীড়িত এলাকার কৃষকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ধান নামে পরিচিত বিইউ ধান-১ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes