Home / জাতীয় / রাজনীতি / ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ : খালেদা
২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ : খালেদা

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ : খালেদা

বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে রূপকল্প-২০৩০ প্রণয়ন করছে বিএনপি। সেই রূপকল্পের সারকথা তুলে ধরলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি চায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট- উচ্চ ও নিম্নকক্ষ। ক্ষমতায় গেলে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন-২০৩০’ এর রুপরেখার কথা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘আমরা সংকট নিরসন করে দেশ-জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক একটি পরিকল্পনা প্রনয়নের জন্য নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করছি। দেশের অগ্রসর চিন্তাচিদ, বুদ্ধিজীবী,পরিকল্পনাবিদ, গবেষক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় কর্মরত শীর্ষস্থানীয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকেও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। সকলের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষে বিএনপি ইতোমধ্যেই ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই অচিরেই ‘ভিশন-২০৩০’ চূড়ান্ত করা হবে।’

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে শনিবার দুপুরে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ভাষণে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।

এরপর তিনি ‘ভিশন-২০৩০’ এর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা ও এর কিছুটা ধারণা তুলে ধরেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ভিশনটি চূড়ান্ত হলে তা দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য পেশ করা হবে। এ ভিশনের আলোকেই আগামীতে আমাদের দলের নির্বাচনী ইশতেহার রচিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য আজো বাস্তবায়িত হয়নি। সেই লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য বাংলাদেশের সকল ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ, প্রতিটি নৃগোষ্ঠী মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে একটি অংশীদারিত্বমূলক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার সম্পন্ন জনকল্যাণমূলক সহিষ্ণু শান্তিকামী সমাজ গড়ে তোলা বিএনপির লক্ষ্য।’

আমরা দেশবাসীকে কখনও ১০ টাকা কেজি দরে চাল, বিনামূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার মতো মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করি না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপিকে স্বাভাবিক ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়নি দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘হত্যা, গুমসহ সব ধরণের জুলুম, নিপীড়ন ও হামলা মামলায় আমাদের সকলকে অতিষ্ঠ করে রাখা হয়েছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘জাতিকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার নষ্ট রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে ছেয়ে যাবে।’

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ
বিএনপি প্রধান বলেন, ‘‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। এর জন্য বিএনপি বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ‘ডবল ডিজিটে’ উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”

‘মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি কেবল ঐক্য, শৃঙ্খলা, সমন্বিত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের অভাবে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। অতীতে বিএনপি ভবিষ্যৎমুখী ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারার নেতৃত্ব দিয়েছে। বিএনপিই পারে ইতিবাচক সম্মুখপ্রসারী এ ধারাকে এগিয়ে নিতে,’ বলেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, বিএনপি ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নয়। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না বিএনপি।

খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে পরস্পরের বিকল্প নয়, সম্পূরক মনে করে। গণতন্ত্র জনগণের সম্মতি ও অংশগ্রহণ এবং জবাবাদিহিমূলক রাষ্ঠ্রীয় ব্যবস্থা ছাড়া কোনো উন্নয়ন হতে পারে না।

তিনি বলেন, তিনিটি ‘গুড’ বা ‘সু’ অর্থাৎ থ্রি জি এর সমন্বয় ঘটাতে চায় বিএনপি। এই থ্রি জি হলো গুড পলিসি, গুড গভরনেন্স এবং গুড গর্ভনমেন্ট। অর্থাৎ সুনীতি,সুশাসন এবং সু সরকার।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে না কাউকে দুর্নীতি করতেও দিবে না। বিএনপি মনে করে সন্ত্রাসবাদ সকল রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ। এ কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনোরকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না। এমনকি বাংলাদেশের মাটি থেকে অপর কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাও মেনে নেবে না। বরং বিএনপি জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণে সন্ত্রাসবাদকে নিরুৎসাহিত ও ব্যবস্থা নেবে।

খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রীয় সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি সকল মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে চায়, যাতে বহু বর্ণের ছটায় উদ্ভাসিত একটি বাংলাদেশি সমাজ গড়ে উঠবে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার মাধমে বাংলাদেশ একটি ‘রেইনবো নেশনে’ পরিণত হবে।

জেগে উঠুন :
দেশবাসীর প্রতিআহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা জেগে উঠুন, ঐক্যবদ্ধ হোন। আপনাদের যে অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে তা ছিনিয়ে নিন। অন্ধকারের পর্দা দুলে উঠেছে। অচীরেই আলো আসবে। ভষ্যিত আমাদেরই ইনশাআল্লাহ।

ক্ষমতাসীন সরকারের নানান দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে হারানো অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেশবাসীকে জেগে উঠার আহবান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির সময় কঠিন হলেও অতীতের মতোই বিএনপি আবারো জেগে উঠেছে। গ্রিক উপকথার সেই ফিনিক্স পাখির মতো ভস্মস্তূপ থেকেই বার বার আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে বিএনপি।

খালেদা জিয়া বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোকে নির্মূল করা, হামলা-মামলায় বিরোধী রাজনৈতিকদের হেনস্তা করা এবং আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পন্থাকে কাজে লাগিয়ে শহীদ জিয়ার স্মৃতিকে মুছে ফেলার অপচেষ্টাই শুধু করা হচ্ছে না, জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারী শাসনে দেশ ও জনগণের অবস্থাও আজ শোচনীয়।

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৫:০১ অপরাহ্ন, ১৯ মার্চ ২০১৬, শনিবার

এমআরআর