আগামি ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতে দেওয়া হবে উন্নতমানের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নতুন প্রকল্পে আরো ৩ কোটি স্মার্ট পার্সোনালাইজেশন ও বিতরণ পরিকল্পনা করছে।এত দিন কার্ড হারিয়ে গেলে অথবা সংশোধন করলে দ্বিতীয়বার স্মার্ট কার্ড দেয়া হতো না। এখন নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে এটি দিতে চায় কমিশন।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা পেতে (ভোটার হওয়ার জন্য) যে কোনো দেশ থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। করোনা মহামারির কারণে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার কার্যক্রম আটকে থাকলেও অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এনআইডির কর্মকর্তারা জানান,আইডিএ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে আরো ৩ কোটি স্মার্ট পার্সোনালাইজেশন ও বিতরণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর জন্য ৪৮০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। আইডিএ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে কার্ড হারিয়ে গেলে অথবা সংশোধন করলে দ্বিতীয়বার ওঠানো যাবে। তবে এতে ইসির নির্দেশনার প্রয়োজন হবে।
ইসি ৯ কোটি স্মার্ট কার্ডের মধ্যে ফ্রান্সের ওবারথার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ স্মার্ট কার্ড হাতে পায়। এর মধ্যে সর্বশেষ পারসোনালাইজেশন করা হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ২ হাজার। বিতরণ করা হয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯ হাজার।
জানা যায়, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির সহায়তায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিস’ প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার চুক্তি হয়।
কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির শর্তগুলো পূরণ করতে না পারায় প্রকল্প শুরু করতেই প্রায় ৩০ মাস বা আড়াই বছর সময় লেগে যায়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুন মাসে। সময়মতো কাজ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় সে সময়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক আর চুক্তির মেয়াদ বাড়ায়নি। ফ্রান্সের ওবারথার কোম্পানির সঙ্গেও চুক্তি বাতিল করে ইসি। পরে সরকারি অর্থায়নে কয়েক দফা প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়।
এদিকে ৪০টি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি সেবা দিতে চায় কমিশন। আর প্রবাসীদের এনআইডি সেবার ফি নির্ধারণ করা যায় কি না,সেটিও যাচাইবাছাই করছে ইসি। প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবা পেতে (ভোটার হওয়ার জন্য) যে কোনো দেশ থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
করোনা মহামারির কারণে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার কার্যক্রম আটকে থাকলেও অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে আবেদন জমা পড়েছে ৪৮টি,সৌদি আরব থেকে ৩৯টি,আরব আমিরাত থেকে ৫৩০টি এবং যুক্তরাজ্য থেকে ১২১টি আবেদন অনলাইনে জমা পড়েছে।
২০০৮ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং নাগরিকদের এনআইডি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর দুই নির্বাচন কমিশনার প্রবাসীদের ভোটার করার ও ভোট নেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ সফরও করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করা হয়,যার লক্ষ্য ছিল বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় এনে ভোট প্রদানের সুযোগ করে দেয়া।
কিন্তু তা না হওয়ায় এবং দেশে না ফিরে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যদিও কমিশন মাঠ পর্যায়ে প্রবাসীদের ভোটার করা বা এনআইডি সেবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ার জন্য বারবার নির্দেশনা দিয়েছে।
অবশেষে ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়। দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন ভোটার রয়েছেন।
অনলাইনে এনআইডি সেবা: গত বছরের ২৬ এপ্রিল অনলাইনে নিজের এনআইডি নিজেই ডাউনলোড করা এবং হারানো ও সংশোধন সেবা অনলাইনে উদ্বোধন করে ইসি।
২০২১ মার্চ পর্যন্ত ইসির সেবা নিতে ভিজিট করেছেন ৭১ লাখ ১ হাজার ৫৫৮ জন নাগরিক। এনআইডি ডাউনলোড করেছে ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৯ জন নাগরিক,নতুন ভোটারের জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৪৫ জন নাগরিক,হারানো আবেদন প্রায় ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬২টি এবং সংশোধন আবেদন পড়েছে প্রায় ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৭০টি।
ঢাকা ব্যুরো চীফ , ৯ এপ্রিল ২০২১
এচি