বদলে যাচ্ছে দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজার। সাগর আর পাহাড় বেষ্টিত কক্সবাজার জেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ছোট বড় ৯৮টি উন্নয়ন প্রকল্প। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২৩টি প্রকল্প।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার। আর এ বদলে যাওয়া কক্সবাজারেই আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে রেললাইনসহ ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও মহেশখালীর মাতারবাড়িতে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ি জনসভাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌকার আদলে মঞ্চ। সে লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান,আজ শনিবার সকালে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন চত্বরে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের রেল চলাচলের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটবেন এবং পতাকা উড়াবেন ও হুইসেল বাজাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী রেলে চড়ে রামু পর্যন্ত রেল ভ্রমণ করবেন। এরপর রামু থেকে হেলিকপ্টার যোগে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেলের উদ্বোধন এবং ১ম টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তরর স্থাপন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ি টাউনশিপ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন এবং মাতারবাড়ি ১২ শ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। যার মধ্যে রেল লাইনসহ ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরর স্থাপন করবেন। সে লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান,মাতারবাড়ি জনসভাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌকার আদলে মঞ্চ। যেখানে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েক লাখ মানুষের সমাবেশে জনসভা পরিণত হবে জনসমুদ্রে। সমাবেশস্থলে সামিয়ানার ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে মানুষের কষ্ট না হয় এবং পানির ব্যবস্থা ও ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান,কক্সবাজারের সঙ্গে দেশের রাজধানী ও অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় কক্সবাজারের পর্যটনের প্রসারের পাশাপাশি মৎস্য, চিংড়ি ও লবণ পরিবহনের পথ সুগম হবে। এছাড়া এ রেলপথ চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমারের সঙ্গে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে সংযুক্ত হবে। এতে চীনের কুনমিং পর্যন্ত রেলপথ চলে যাবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা জানান, গেল ১৫ বছরে ১২ বার কক্সবাজার সফরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আসেন প্রধানমন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রয়াসে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার ৯৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার বদলে গেছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালীর মাতারবাড়ি দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া হিসাবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মাতারবাড়িতে আসছেন-তাইএখানকার মানুষ আনন্দে আত্মহারা।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন-‘কক্সবাজারবাসী কিছু না চাইতেই বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের সব দিয়েছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইনের দাবি ব্রিটিশ আমল থেকেই করা হচ্ছে। সেই দাবি পাকিস্তান আমলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। সর্বশেষ জাতির জনকের কন্যার হাত দিয়ে আমরা রেললাইন পেলাম।’
যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী আজ যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করব্নে তার মধ্যে রয়েছে ৯টি মেগা প্রকল্পসহ ১৪টি প্রকল্প। উদ্বোধন হতে যাওয়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন, মাতারবাড়ির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল, বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত খুরুশকুল সেতু,সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তকরণ, উখিয়ার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, উখিয়ার রত্না পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, রামুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চকরিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ, কুতুবদিয়া ঠান্ডা চৌকিদার পাড়া আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মহেশখালীর গোরকঘাটা-শাপলাপুরের জনতাবাজার সড়ক, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি ভরাট, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, ঈদগাঁও জাহানারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহেশখালীর ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ভবন।
যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেলের ১ম টার্মিনাল, রামুর জোয়ারিয়ানালার নন্দাখালী সড়কে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ প্রকল্প ও টেকনাফের মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার।
১১ নভেম্বর ২০২৩
এজি