Home / বিশেষ সংবাদ / ১৫ দিনের পরিবর্তে এক মাস ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ
Hilsha fish
ফাইল ছবি

১৫ দিনের পরিবর্তে এক মাস ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ

মা-ইলিশ সংরক্ষণের জন্য প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। এর আগে ১৫ দিন ইলিশ না ধরার ঘোষণা দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

জাতীয় সংসদ ভবনে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এতে কমিটি সভাপতি মীর শওকাত আলী বাদশা সভাপতিত্ব করেন।

মা-ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ আহরণ ১৫ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন করার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণার ফলাফল যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে সুপারিশ করেছিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পরে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেওয়া প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইলিশ আহরণ ২২ দিন বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে মা-ইলিশ সংরক্ষণের সময়সীমা ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন করার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী কর্তৃক সকল সংসদ সদস্যের কাছে নির্দেশনা পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে যা আছে

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইলিশ মাছ একটি অভিপ্রায়ণকারী সাগরের মাছ। দেশে ইলিশ প্রজননের চারটি প্রধান ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে। এগুলো হলো মেঘনার মোহনার ঢালচর, মনপুরা দ্বীপ, মৌলভীবাজার ও কালীরচর। প্রজনন মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এসব প্রজননক্ষেত্রে প্রবেশ করে। ইলিশ মাছ সারা বছরই কম-বেশি ডিম ছাড়ে। পরিচালিত গবেষণায় মধ্য ভাদ্র ও মধ্য কার্তিক এবং মধ্য পৌষ ও মধ্য ফাল্গুন এই দুই প্রজনন মৌসুমে ইলিশ বেশি হারে ডিম ছাড়ে বলে উল্লেখ করা হয়।

১৫ দিনের পরিবর্তে এক মাস ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করা হলে চারটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে গবেষণায়। তা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ইলিশ প্রজনন ও আহরণের ভরা মৌসুমে এক মাস ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হলে ইলিশ আহরণ অর্থাৎ উৎপাদন অনেক কমে যাবে। সেই সঙ্গে ভোক্তারা ইলিশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে বলে উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয়েছে, মাসব্যাপী অবাধে ইলিশ ডিম ছাড়লে সামগ্রিকভাবে জলজ পরিবেশ কাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক খাদ্য ও আবাসস্থল সংকটের কারণে মাছের স্বাস্থ্য, আকার ও ডিম ছাড়ার সক্ষমতা হ্রাস হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলে ও ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন দুরূহ ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে বলেও উল্লেখ করা হয়।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বিগত ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির ১২তম বৈঠকের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্য আহরণ ও সামুদ্রিক ট্রলার লাইসেন্স প্রদান ও বিদেশি আটককৃত নৌযানগুলোর অবস্থা এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় হাসপাতাল স্টোরে যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সংগ্রহ, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া এবং প্রাণিরোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক বায়োসিকিউরিটি ম্যানুয়েল ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্য আহরণ ও সামুদ্রিক ট্রলার লাইসেন্স প্রদানে যেসব কর্মকর্তা নিযুক্ত, তাঁদের মনিটরিং করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি।

এ ছাড়া বৈঠকে জানানো হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার থেকে চাহিদা মোতাবেক কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্তিসাপেক্ষে খামামিদের মাঝে জীবাণুনাশক ওষুধ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে কোনো প্রকার বায়োসিকিউরিটি ম্যানুয়েল দেওয়া হয় না।

বর্তমানে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে প্রাণিরোগের চিকিৎসার বিষয়ে ব্যবহারিক (ইন্টার্নশিপ) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। আরো জানানো হয় যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজে গতিশীলতা আনয়নের জন্য কর্মকর্তাদের দিয়ে ২০টি টহল দল গঠন করা হয়েছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যথাশিগগির সম্ভব মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে কমিটির সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক, প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, খন্দকার আজিজুল হক আরজু, মুহাম্মদ আলতাফ আলী এবং সামছুন নাহার বেগম অংশ নেন।

এ ছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৭:২১ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, সোমবার

এমআরআর