মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চাঁদপুরে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা জানান মন্ত্রী।
ডা. দীপু মনি জানান, গত সপ্তাহে নেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলমান ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। দীর্ঘ ১৭ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণে শিশু-কিশোররা স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের কথা হয়েছে, তারা মনে করছেন আমরা যে সংক্রমণের হার অনেক কম রাখতে পেরেছি, তার অন্যতম কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা। অন্য অনেক কারণের পাশাপাশি এটিও অনেক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন তারা।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। আগামী দিনে আরো কমবে। ফলে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ছুটি রয়েছে তা আর বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে আমরা চাইলে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দিতে পারবো। যদি এর মধ্যে আর বড় কোনো সমস্যা না হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে সঠিক মনিটরিংও নিশ্চিত করার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।
বড় পাবলিক পরীক্ষাগুলো নেয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী জানান, নভেম্বরের মাঝে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের শুরুতে এইচএসসির ঘোষণা আগেই দেয়া হয়েছে। আশা করছি, সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি জানান, ১৮ বছর বয়সীরা টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে ১২ বছর বয়সী পর্যন্ত টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের দ্বিতীয় সেশনে সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত তাদের পরিবারের সদস্যদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলো মেনে আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। যার জন্য কিছু ফাইজারের টিকা এরই মধ্যে দেশে এসে পৌঁছাছে। আরও পৌঁছাবে। আরও অর্ডার দেওয়ার জন্য (ফাইজারের টিকা) আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এর আগে গত ২৬ আগস্ট সবশেষ ঘোষণায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও এক দফা বাড়িয়ে ১১ সেপ্টেম্বর করা হয়। ওইদিন শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। স্কুল-কলেজ ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ রয়েছে, খুললেও করোনা আক্রান্তের আশংকা রয়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাই।’
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। মারণ ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১