মুকুটহীন সম্রাটের চলে যাওয়ার ১১ বছর

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। দেশের চলচ্চিত্রানুরাগীরা তাকে ভালোবেসে ‘বাংলার শেষ নবাব’ বলেন। দেশের চলচ্চিত্র দর্শকের মধ্যে তিনি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও ‘মুকুটহীন নবাব’ হিসেবেও খ্যাত। আজ থেকে ১১ বছর আগে ২০১৩ সালে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিকে অঝোরে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি দেন আনোয়ার হোসেন। অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও ১৯৬৭ সালের ২৪ মার্চ মুক্তিপ্রাপ্ত খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ ওই একটি চলচ্চিত্রে নবাব সিরাজের চরিত্রে অভিনয় করেই চিরকালের কিংবদন্তি হয়ে আছেন তিনি।

আনোয়ার হোসেন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, নাট্যধর্মী, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, পারিবারিক মেলোড্রামা, নাট্যধর্মী, বক্তব্যধর্মীসহ বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ হিসেবে তার ওই একটি ‘সিগনিফিকেন্ট’ চরিত্রে অভিনয়ের কোনো তুলনাই হয় না। মানুষ তাকে কখনোই ভুলবে না ওই একটি চরিত্রের কারণেই। তার ওই নিখুঁত অনবদ্য অভিনয়ের মধ্যেই বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার গোটা আদলটিই বাংলার মানুষের মানসপটে বারবার ভেসে ওঠে।

অভিনেতা আনোয়ার হোসেন ১৯৩১ সালে ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনে তিনি প্রখ্যাত নাট্যকার আসকার ইবনে সাইখের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজে পড়াকালে অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেই ঢাকাই ফিল্মে পদার্পণ করেন। ১৯৫৮ সালে মহিউদ্দেনের ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার ঢাকাই ফিল্মে অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রটি ১৯৬১ সালের ১০ নভেম্বর মুক্তি পায়। সেই থেকে শুরু করে তার দীর্ঘ ৫২ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানস্বরূপ একুশে পদক লাভ করেন। অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ওই পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া তিনি পাকিস্তানের নিগারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে দীর্ঘ ৫২ বছরের অধিকাংশ সময় সহ-অভিনেতার কাজ করলেও অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে তিনি সহঅভিনেতার পাশাপাশি নায়ক চরিত্রেও অভিনয় করতেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র- ‘সূর্যস্নান’, ‘কাচের দেয়াল’,‘দুই দিগন্ত’, ‘রাজা এলো শহরে’, ‘বন্ধন’, ‘পালঙ্ক’, ‘গোধূলীর প্রেম’, ‘রাজা সন্ন্যাসী’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘পরশমণি’, ‘যাহা বাজে শেহনাই’ (উর্দু ছবি), ‘শহীদ তিতুমীর’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘গাজী কালু চম্পাবতী’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ধাঁকাবাঁকা’, ‘কোথায় যেন দেখেছি’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘শেষ রাতের তারা’, ‘লালন ফকির’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘লাঠিয়াল’, ‘রংবাজ’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘লাল সালু’, ‘ভাত দে’ প্রভৃতি।

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এজি

Share