১১ বছরেও চালু হয়নি শিশু হাসপাতাল

ঝিনাইদহে ২৫ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটি এগারো বছরেও চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে চিঠি চালাচালির মধ্যে হাসপাতালের কার্যক্রম ও ডাক্তার কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টি আটকে আছে।

২০১২ সালে ২১ নভেম্বর শিশু হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের সহকারী সচিব নুরুন নবী চৌধুরী ১৬০নং স্মারকে চিকিৎসকসহ ১৮টি পদ সৃষ্টি প্রজ্ঞাপন জারী করলেও এই চার বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ বিশেষজ্ঞ কোন শিশু চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিতে পারেনি।

আবার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, কুক, মালি, নিরাপত্তাকর্মী ও সুইপারের ১২টি পদে লোকবল নিয়োগ দিলেও গত ৩ মাস তাদের বেতন হয় না।

ঢাকার দারুস সালাম রোডের উষা সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিঃ আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগের ঠিকাদার ছিল।

এদিকে শিশু হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে দিনকে দিন শিশু রোগীর চাপ বড়ছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে শিশুদের জন্য মাত্র ৮টি শয্যা আছে। কিন্তু প্রতিদিন ৬০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। আউটডোরে ২০০ শিশু রোগীর ধকল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের একমাত্র বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম।

সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মানাধীন শিশু হাসপাতালের চারটি ভবন ধীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে। কন্সট্রাকশন মেইনটেনেন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের (সিএমএমইউ) নির্মান কাজে চরম ত্রুটির কারণে ভবনের বারান্দা ধ্বসে পড়েছে মাত্র ১১ বছরে। ময়লা আবর্জনায় ভরা জরাজীর্ন শিশু হাসপাতালের লোহার গ্রিল, জানালা দরজা ও কাচের গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। চুরি হয়ে গেছে বৈদ্যুতিক মুল্যবান সরঞ্জাম। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন সময় হাসপাতালে আসা মুল্যবান মেশিন ও আসবাবপত্র।
গত দুই বছর জোড়াতালি দিয়ে শিশু হাসপাতালটি চালু করা হলেও সেখানে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফাল্গনি রানী সাহাকে ডেপুটেশনে শিশু হাসপাতালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সময় দিতে পারেন না।

তার সঙ্গে দুইজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শহিদুর রহমান ও রোখসানা ওয়াসিম দায়িত্ব পালন করছেন। শিশু চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রতিদিন ১০/১৫ জন শিশু রোগীকে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা ও উপদেশ দিচ্ছেন তারা।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় শিশু হাসপাতালটিতে শিশুদের মারাত্মক রোগের নিদ্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই, বরাদ্দ নেই সরকারী ওষুধ। তাই চিকিৎসার জন্য ভরসা একমাত্র খাবার স্যালাইন।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম, জানান, ২৫ শয্যার শিশু হাসপাতালটি ২০০৫ সালে ৩ একর জমির উপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপান করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জমি অধিগ্রহন বাবদ ৮৮ লাখ টাকা ও ভবন নির্মানে ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।

২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল শিশু হাসপাতালের নির্মান কাজ শেষ হয় এবং একই বছরের ৩০ আগষ্ট ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

Share