চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ দুই উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর উপর উটতলী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যর সেতুর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কর্মকর্তা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুই উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক কালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীতে ১৩ টি স্প্যানের উপর নির্মিতব্য দৃষ্টিনন্দন সেতুটি নির্মিত হলে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বানিজ্যর বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চল এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুলাইয়ে একনেক সভায় উটতলী খেয়াঘাটে সাড়ে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্য ১০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন হয়। ওই বছর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ পায় ঢাকার দোহার উপজেলার মো. আইয়ুব আলীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ।
২০২১-২২ অর্থবছরে কাজ শেষ করা কথা। কিন্তু গত দুই বছরে কাজ শুরু করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে সম্প্রতি সেতুটির অলিপুর অংশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সেতুর মালামাল আসা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে সেতুর এপ্রোচ সড়কের জমি অধিগ্রহণ শুরু না হলেও সম্ভাব্য সড়কের দুই পাশে লাল নিশানা লাগিয়েছে সেতুর প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর সেচপ্রকল্প বেড়িবাঁধ(সিআইপি) সড়কে মুন্সীরহাট বাজারের পাশ দিয়ে উটতলী সেতুর এপ্রোচ সড়কের জন্য জমির দুই পাশে লাল নিশানা লাগানো হয়েছে। অন্যদিকে হাজীগঞ্জের অলিপুর অংশেও একই ভাবে লাল নিশানা টানানো হয়েছে।
উটতলী ঘাট এলাকায় দেখা যায়, খেয়াঘাটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। প্রতিবার পার হওয়ার জন্য ইজারাদারকে ৫ টাকা ও নৌকার মাঝিকে ৫ টাকা করে দিতে হয়। এতে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারে যাতায়াতের সময় টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জের অলিপুর গ্রামের শিক্ষার্থীদের মুন্সীরহাটে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। শিক্ষার্থী আলমগীর, লায়লা আক্তার, অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা, নুরজাহানসহ একাধিক ব্যক্তি এ কথা বলেন।
সিএনজি চালক হানিফ, আরিফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, শাহপরান জানান, আমরা এখন অলিপুর থেকে কৈয়ারপুল পর্যন্ত যাত্রী আসা নেওয়া করি। সেতুটি নির্মিত হলে যাত্রীও বাড়বে , আমাদের আয়ও বাড়বে।
মুন্সীরহাট গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, গত দুই বছর ধরে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। অবশেষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে কাজ শুরু করেছে দেখে ভাল লাগছে। মুল সেতুর কাজ শুরুর অপেক্ষা।
উটতলী খেয়াঘাটের ইজারাদার তাফাজ্জল হোসেন বলেন, একসময় এই ঘাট দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার লোক পারাপার করত। তখন ১ টাকা করে নিলেও অনেক টাকা হতো। এ বছর ২ লাখ টাকার ইজারা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
সুরমা এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, ৬৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৩টি স্প্যানের ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজ যোগে মালামাল আসা শুরু হবে। এরপরই দ্রুত কাজ শুরু হবে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আববার আহমেদ জানান, চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই উদ্বোধনের মাধ্যমে সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলে সংযোগ সড়কের টেন্ডারও দ্রুত করা হবে। এখন সংযোগ সড়কের এলাইনমেন্টের কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ত্রিশ বছর প্রচেষ্টার ফসল উটতলী সেতু, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান অযথা ঢিলেমি করছে। সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুই উপজেলাসহ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান,৩১ আগস্ট ২০২২