অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ মরুভূমি। এই মরুভূমির দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া রাজ্যে অংশের মাঝখানে হঠাৎ কিছু গর্ত চোখে পড়ে। ওপর থেকে বোঝার উপায়ই ওই গর্তগুলো কেন। তবে, গর্তের মধ্যেই কিছুদূর গেলেই চোখে পড়বে ঝলমলে আলোর এক শহর। মরুভূমির নিচের এই শহরের নাম কুবার পেডি।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া রাজ্যের কুবার পেডি শুরুটা হয়েছিল অলংকারের পাথর উত্তোলনের একটি কেন্দ্র হিসেবে। ১০১ বছর ধরেই এখানে মানুষের বসবাস। বর্তমানে এর জনসংখ্যা সাড়ে তিন হাজার।
অবস্থান না জানা থাকলে কুবার পেডি শহর খুঁজে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ ফ্রান্স ও জার্মানির সমান মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত এই শহর। আর শহরটিতে মাটির ওপর কোনো স্থাপনা নেই বললেই চলে।
শহর বললেই চোখে ভেসে ওঠে পিচঢালা রাস্তা। তবে, কুবার পেডি শহর এর ব্যতিক্রম। এখানে রাস্তার বদলে আছে দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথ। মাটির নিচে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এসব সুড়ঙ্গপথ প্রতিটি স্থাপনাকে যুক্ত করেছে। কুবার পেডির স্থাপনাগুলোও আর দশটি শহরের মতো নয়। এখানে ঘর বানাতে ইট-সুরকি লাগেনি, বরং মাটি কেটেই তৈরি হয়েছে ঘরবাড়ি। তবে একটি বিষয়ে এর সঙ্গে স্বাভাবিকের মিল পাওয়া যায়, আর তা হলো আসবাবপত্র। স্বাভাবিক বাড়িতে যেমন আসবাব থাকে, কুবার পেডি শহরের প্রতিটি বাড়ি, হলরুমসহ বিভিন্ন স্থাপনার আসবাবও একই রকম।
কুবার পেডি শহর আসলে কতটা বড় এর স্থাপনাগুলোর কথা বললেই বোঝা যায়। এখানে আছে পাঁচটি চার্চ, একটি রেস্টুরেন্ট ও একটি আবাসিক হোটেল। চাইলেও যে কেউ মাটির নিচের থাকতে পারেন। তবে এখানে বেড়াতে আসা মানুষদের জন্য মাটির ওপর ক্যাম্প করে থাকারও ব্যবস্থা আছে।
কীভাবে হলো কুবার পেডি শহর?
১৯১৫ সালে নিজের ছেলেকে নিয়ে খনিতে সোনা খুঁজছিলেন এক বাবা। সোনা না পেলেও তাঁরা যা পেয়েছিলেন তা কোনো অংশেই ফেলনা নয়। অলংকারের জন্য ঝলমলে পাথরের খোঁজ পেয়েছিলেন তাঁরা। পরবর্তীকালে ওই পাথর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়। তবে খনিতে অভিযানে গিয়ে বাবা ও ছেলে ভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। মরুভূমির গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁদের বেঁচে থাকায় দায় হয়ে যায়। তবে খনির ভেতরটা ছিল বেশ ঠান্ডা। এ থেকে খনির মধ্যে বসবাস শুরু করেন বাবা ও ছেলে। ধীরে ধীরে মরুভূমির খনিতে মানুষ আসা শুরু করে এবং একসময় সেখানে অধিবাসীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এখনো কুবার পেডি শহর অলংকারের পাথর সরবরাহকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে এর বাইরেও এর অপর পরিচয় ‘গর্তের ভেতরের শহর’।
আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৪:১৬ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০১৬, শনিবার
এমআরআর