পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় যোগদানের মধ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ‘জলবায়ু বিষয়ক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে’ দৃঢ় ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ ব্যক্ত করায় বাংলাদেশ প্রতি বছরের জন্য ১০০ বিলিয়ন মার্কিন বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল গঠনের বিষয়ে আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে (জলবায়ু তহবিল সম্পর্কিত ১০০ বিলিয়ন ডলার) দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেখতে পেয়ে আশাবাদী। শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল প্রকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৪০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান বৃহস্পতিবার এতে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।
প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে প্রশমন ও অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল উত্তোলনের একটি বিধান রাখা হয়েছিল তবে এখনো এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবাযন হয়নি। তবে ড. মোমেন বলেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বজায় রাখতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, তহবিল মুখ্য নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। যদি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকে, তাহলে অর্থায়নে কোনো সমস্যা হবে না।
মোমেন জলবায়ু বিষয়ক নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনকে ‘যুগান্তকারী’ বলে অভিহিত করেছেন, যার আয়োজক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশ্বনেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বছরের নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কোপ-২৬) পথে এই শীর্ষ সম্মেলনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। এর আগে জলবায়ু বিষয়ক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরি গত ৯ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্বনেতাদের বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে উন্নত দেশগুলোকে তাদের কার্বন নির্গমন হ্রাসের পাশাপাশি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বার্ষিক জলবায়ু তহবিল নিশ্চিত করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমন হ্রাসের তাৎক্ষণিক ও উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোরও প্রশমন ব্যবস্থার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়া বিশ্ব নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরিও এতে যোগ দেন।
ঢাকা ব্যুরো চীফ