পাপন ত্রীপুরা চাঁদপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পিতা বাবুল ত্রিপুরা একজন হতদরিদ্র রিকশাচালক। তার স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য হয়ে দেশের সেবা করবেন। কিন্তু এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় দারিদ্রতা।
তার স্বপ্নের কথা শুনে পরিচিতজনরা বলতেন- ‘পুলিশে চাকরি পাওয়া অত সহজ না। তোমার যতই যোগ্যতা কিংবা মেধা থাকুক, বড় অংকের টাকা ছাড়া চাকরি হবে না। পুলিশে চাকরি করতে হলে বাড়ি ঘর বিক্রি করতে হবে।’
কিন্তু সেসব কথা আজ মিথ্যা প্রমানিত হলো। মাত্র একশ টাকায় তাঁর চাকরি হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশে। এমন স্বপ্ন পূরণে আবেগে আপ্লুত সে। এজন্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদকে ধন্যবাদ জানায় পাপন ত্রিপুরা। ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেন না নিজের দরিদ্র পিতা-মাতাকেও।
পাশের চেয়ারে বসে থাকা বাবাকে জড়িয়ে ধরে গর্ব করেন বলেন, আমার বাবার জন্যেই আজ আমি পুলিশে নিয়োগ পেলাম। ছেলের এমন অর্জনে আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন গরীব রিকশাচালক বাবুল ত্রিপুরা। কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, আমি স্বপ্নেও ভাবিনী টাকা ছাড়া শুধুমাত্র যোগ্যতার মূল্যায়নে আমার ছেলের পুলিশে চাকরি হবে। আমি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
৭ নভেম্বর রোববার সকালে চাঁদপুর পুলিশ লাইনসে টিআরসি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় নির্বাচিতদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিফিং অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন মাত্র একশ টাকায় পুলিশে চাকরি পাওয়া চাঁদপুরের তরুণ-তরুনীরা।
বিনা টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললেন পিতাহীন দরিদ্র সন্তান জয় চৌধুরী। সে জানায়, আমার বাবা নেই। মা লক্ষ্মী রাণী চৌধুরী কৃষি কাজ করেন। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে চাকরিটা তার কাছে পৃথিবী হাতের মুঠোই পাওয়ার মতো ঘটনা।
পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া প্রবাসী শাহআলম মিয়ার কন্যা আফরোজা আক্তার জানায়, আমি জীবনেও ভাবিনি টাকা কিংবা তদবির ছাড়া পুলিশে চাকরি হয়। আমাদের এসপি স্যার বলেছিলেন, কেবলমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতেই আমাদের চাকরি হবে। আমরা যেন দালাদের খপ্পরে না পরি। আজকে সেটি প্রমাণ হলো। এইভাবে চাকরি পেয়ে আমি আনন্দিত।
বাবা-মা হারা মো. সাগর প্রধানীয়া জানান, আমি গরীব ঘরের সন্তান। আমার বাবা মা নেই। বড় বোন আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন। বোনের পরামর্শে পুলিশ কনস্টবল পদে নিয়োগ পেতে ফরম পুরন করি। কিন্তু আমি কল্পনাও করিনি, আমার মতো একজন এতিম ছেলের বিনা পয়সায়, মন্ত্রী-এমপির ততবির ছাড়া আমার চাকরি হবে। আমি আমার বোন এবং চাঁদপুরের পুলিশ সুপার স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলাতেও গত ২৭ অক্টোব পুলিশের ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে’ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এ পরীক্ষায় সর্বমোট ২হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। যার মধ্য থেকে প্রথম ধাপে ৪১৩ জন, দ্বিতীয় ধাপে ১২৯ জন এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে চুড়ান্তভাবে ৫০ জনকে নির্বাচন করা হয়। এছাড়া অপেক্ষমাণ তালিকায় ১১ জনকে রাখা হয়েছে। নির্বাচিত সদস্যদের মেডিকেল রিপোর্টে যদি কেউ বাদ পরে তাহলে সেই তালিকা থেকে বেশি মার্ক পাওয়াদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেওয়া হবে বলে জানা যায়।
স্বচ্চতা ও সততার এই বিরল দৃষ্টন্ত স্থাপন করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার)। শুধু তাই নয়, নিয়োগপ্রাপ্তদের সকল প্রকার মেডিকেল চেকআপ পুলিশ হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে করার ব্যবস্থা করেন তিনি।
প্রতিবেদকঃ আশিক বিন রহিম, ৭ নভেম্বর ২০২১