নানা আলাপ আলোচনার পর শনিবার প্যারিসে ১৯৬ দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছে ঐতিহাসিক জলবায়ু চুক্তি। এই চুক্তিতে অংশ নেয়া দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। এবারই বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রথমবারের মত ক্ষতিকর গ্রাস কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার বিষয়ে একমত হল।
চুক্তি স্বাক্ষরের অগে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুব্রেন্ট ফাবিয়ুস বলেন,‘আমি কক্ষের সবার মধ্যেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি গৃহীত হল।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা একটি উচ্চাভিলাষী ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি নিয়ে এসেছি’।
চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন,‘বিশ্বের প্রায় সবক’টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সবাইকে ধন্যবাদ।’ এই চুক্তিকে ‘ভবিষ্যতের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্য। ভারতের জলবায়ুমন্ত্রী প্রকাশ জাভাদকার এ চুক্তিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন,‘আমরা খুব খুশী। কেননা এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায়িত্বকে আলাদ করতে পেরেছে।’
চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে কার্বন নিঃসরণের লাগাম টানবে দেশগুলো। এই চুক্তিকে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতিকে কয়েক দশকের মধ্যে রূপান্তরের জন্য ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করছেন অনেকে।
এর আগে চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করার সময় ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফাবিউস একে ন্যায়সঙ্গত ও আইনি বাধ্যবাধকতামূলক হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এছাড়া চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সীমা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ‘বেশ কম’ বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
চুক্তি অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের পর থেকে প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি ডলার দেবে। এছাড়া গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুতি ঠিকমত পালন হচ্ছে কি না পাঁচ বছর অন্তর তা পর্যালোচনার বিধান থাকছে।
প্যারিসে জাতিসংঘের উদ্যোগে গত ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল জলবায়ু সম্মেলন। এই সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। পরে চুক্তির স্বার্থে শনিবারও বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ছয় বছর আগে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনেও একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা।