চাঁদপুর

হয়রানির আরেক নাম চাঁদপুর বিকাশ কাস্টমার কেয়ার

* বিনা নোটিশে একাউন্ট সাসপেন্ড হওয়া বিকাশ গ্রাহকদের পাঠানো হচ্ছে কুমিল্লায়। *জেলার শহর ও বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা গ্রাহকদের সাথে ভালো আচরণ করতে অনেকটাই ব্যর্থ হচ্ছে কাস্টমার ম্যানেজার। * “সংবাদ পরিবেশন করা হলে আপনার-আমার দু’জনের ক্ষতি হবে” সংবাদকর্মীর উদ্দেশ্যে বললেন ম্যানেজার।

বর্তমান সময়ে দেশর বিভিন্ন স্থানে দ্রুত টাকা পাঠানোর অন্যতম মাধ্যম ‘বিকাশ’ সেবা। দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় চাঁদপুরেও বিকাশ গ্রাহকরা আত্মীয় পরিজন ও ব্যবসা অধিকাংশ লেনদেন বিকাশ সেবার মাধ্যমে করে থাকেন।

বিকাশ গ্রাহকদের সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন সেবা দেয়ার জন্য চাঁদপুরে একটিমাত্র কাস্টমার কেয়ার থাকলেও সেখানে গ্রাহকের সেবা দেয়ার পরিবর্তে উল্টো নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও চাঁদপুরে এই প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের নির্ধারিত নিবন্ধন ফরম পূরণ করে একাউন্ট খোলার পরেও বিনা নোটিশে যে কোনো গ্রহককে হঠাৎ নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হচ্ছে।

এ থেকে পরিত্রানে গ্রাহকরা বিকাশের হেল্প লাইনে (১৬২৪৭) ফোন করেও সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না। যার ফলে চাঁদপুরে গ্রাহকদের কাছে বিকাশ এখন ‘বিষাধে’ পরিনত হচ্ছে।

চাঁদপুর শহরের সাবেক ছায়াবানী সিনেমা হল এলাকায় অবস্থিত জেলার একমাত্র বিকাশ সেন্টারের ছোট্ট অফিসটিতে উন্নতমানের গ্রাহক সেবা প্রদানের মত কোন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেই। দুটি কম্পিউটারে মাত্র দু’জন বিকাশ প্রতিনিধি কাজ করায় অফিসে আসা গ্রাহকরা ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও গ্রাহক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এছাড়াও তারা জেলার শহর ও বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা গ্রাহকদের সাথে ভালো আচরণ করতে অনেকটাই ব্যর্থ হচ্ছে।

সমস্যা নিয়ে আসা গ্রাকদের দাবি কাস্টমার কেয়ারে কেউ সেবা নিতে গেলে আগে জিজ্ঞেস করা হয় হেল্প নাইনে ফোন করেছে কিনা।

এছাড়া ওই গ্রাহক বিকাশে লেনদের একটি তথ্য দিতে ব্যার্থ হলেই সাথে সাথে তাকে কুমিল্লা কাস্টমার সেন্টারে চলে যেতে বলা হচ্ছে।

বিকাশের সেবা নিতে আসা ফরিদগঞ্জ উপজেলার সালমা বেগম (৩৫) চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘গত এক বছর আগে তিনি বিকাশের নির্ধারিত এজেন্ট থেকে গ্রাহক নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করে তার গ্রামীন নাম্বারটি বিকাশ করেন। সে সময়ে তার ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সংযুক্ত করেছে। গত সপ্তাহে এক আত্মীয় তার বিকাশ একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলো। ওই টাকা সে স্থানীয় এজেন্টের কাছে উত্তোলন করতে গেলে একাউন্টটি সাসপেন্ড লেখা দেখতে পান। এরপর থেকে তিনি আর তার বিকাশ একান্ট থেকে টাকা উত্তেলন করতে না পারায় কাস্টমার কেয়ারে ছুটে আসেন। কিন্তুবিকাশ প্রতিনিধি তার কাছে ‘টাকা ক্যাশ আউট, ক্যাশ ইন’ সম্পকে সর্বশেষ ৩টি করে ৬টি তথ্য জানতে চান। এতে তার ফোন থেকে আগের সব ম্যাসেজ ডিলিট হয়ে যাওয়ায় সর্বশেষ ক্যাশ আউট তিনি বলতে পারেননি। এই একটি কারণে বিকাশ প্রতিনিধি সোজা কুমিল্লা চলে যেতে বলেন। তিনি ফের ওই প্রতিনিধিকে কোনো প্রশ্ন করলে প্রতিনিধি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

একই অভিযোগ করেছেন শাহাতলি বাজার এলাকার আব্দুল মালেক। তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘হঠাৎ করেই তার একাউন্টটি সার্ভিস ডাউন দেখাচ্ছিলো। এমন অবস্থায় তিনি বিকাশের হেল্প লাইনে (১৬২৪৭) ফোন করলে কাস্টমার কেয়ার থেকে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার চাওয়া হয়। তিনি তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বারটি দিলে ওপাশ থেকে বলা হয় ‘আপনি নাম্বার ভুল বলছেন’। তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, এটাতো আমারই জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার। কেন ভুল হবে! এমন অবস্থায় ওপাশ থেকে কল কেটে দেয়া হয়। পরে তিনি কস্টামরা সেন্টারে এলে সেখান থেকে তাকে কুমিল্লা চলে যেতে বলেন।

কাস্টমার কেয়ার থেকে সেবা বঞ্চিত হওয়া স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী জানায়, গত রমজানের শেষ দিকে তার বিকাশ একাউন্টে পত্রিকার কিছু বিজ্ঞাপন বিল আসে। তিনি এক বিকাশ এজন্টের কাছে টাকা ক্যাশ আউট করতে চাইলে হঠাৎ করেই একাউন্ট সাসপেন্ড দেখায়। পরে তার বিকাশ একাউন্টে আরো কিছু টাকা ক্যাশ ইন হলেও কিছুতেই তিনি ক্যাশ আউট করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তিনি ঈদের পরে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে গেলে সেখানে প্রচন্ড ভিড় দেখে একে একে ৩ দিন ফিরে আসেন। এক পর্যায়ে গত গত সপ্তাহে তিনি পুনরায় কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে সিরিয়াল নম্বর নিয়ে ছোট্ট অফিসটিতে লাইনে দাঁড়ান। দীর্ঘক্ষণ পরে তার সিরিয়াল নাম্বারের ডাক এলে বিকাশ প্রতিনিধি মো. জাফরুলকে সমস্যার কথা জানান। বিকাশ প্রতিনিধি জাফরুলের সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়াসহ তার মেবাইলে ক্যাশ ইন হওয়া ম্যাসেজগুলো দেখাতে সক্ষম হলেও সর্বশেষ ক্যাশ আউটটি সঠিকভাবে মনে করতে পারেননি। এতে সাথে সাথেই ওই প্রতিনিধি তাকে কুমিল্লা চলে যেতে বলেন।

কি কারণে তার একাউন্ট সাসপেন্ড হয়েছে জানতে চাইলে ওই বিকাশ প্রতিনিধি তাকে কথা না বাড়িয়ে কুমিল্লা চলে যেতে বলেন।

পরে বাধ্য হয়ে তিনি সাংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে কারণ জানতে চাইলে প্রতিনিধি তাকে জেলার টেরিটোরি ম্যানাজার রবিনের মোবাইল নাম্বার (০১৭৪০৫৮৩৪৪) দেন। এসময় সেখানে উপস্থিত একাধিক গ্রাহক কাস্টমার কেয়ার ও বিকাশ সম্পর্কে নানান অভিযোগ করেন।

পরে সংবাদকর্মী নিজের পরিচয় দিয়ে টেরিটোরি ম্যানাজারের নাম্বারে ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কি কারণে আপনার একাউন্ট সাসপেন্ড হয়েছে তা আমরা বলতে পারছি না, হেড অফিসে যোগাযোগ করে আপনাকে জানাবো’।

চাঁদপুরের মতো একটি জেলা শহরের বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থাকলেও সেখানে এতটুকুন সেবা দিতে পারছেন না কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যানাজার বলেন, ‘এখানে এটা জানা সম্ভব না। এটা জানতে হলে আপনাকে কুমিল্লা যেতে হবে। এছাড়া এ “সংবাদ পরিবেশন করা হলে আপনার-আমার দু’জনের ক্ষতি হবে” বলে তিনি সংবাদকর্মীকে জানান।

পরে নিরাশ হয়ে তিনি কুমিল্লা জেলার কান্দিরপাড় কাস্টমার কেয়ারে চলে যান।

সেখানে সমস্যার কথা খুলে বললে বিকাশ প্রতিনিধি তার জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে একটি নিবন্ধন ফরর্ম পুরণ করতে বলে। ফরর্মটি পুরণ করা হলে ৫ মিনিট পরে বিকাশ একাউন্ট সচল হয়ে যায়।

কি কারণে একাউন্ট সাসপেন্ট হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার একাউন্ট নিবন্ধনের সকল তথ্যগুলো আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি। এটি হয়তো আপনার ভুল না হয় আমাদের এজেন্টের ভুল। তাই কোম্পানি আপনার একাউন্ট সাসপেন্ড করে দিয়েছিলো।

এ বিষয়ে বিকাশের চাঁদপুর পরিবেশক মো. লতিফের মুঠো ফোনে (০১৭১১৮৭৬৩৪০) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখানে সরসরি কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি নেই।’

আশিক বিন রহিম : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২:০০ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৬, রোববার
ডিএইচ

Share