হেরোইন ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন নারীরা

‎Sunday, ‎May ‎10, ‎2015  01:00:49 PM

শেরপুর প্রতিনিধি :

হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাদকের ছোবলে শেরপুরে তরুণ সমাজ বিপথগামী হচ্ছেন। জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। মাদকাসক্ত নেই এমন পরিবার এখন শহরে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে মাঝেমধ্যে দুই-একজন মাদকসেবী কিংবা খুচরা মাদক ব্যবসায়ীকে ধরলেও গডফাদাররা থেকে যাচ্ছেন পর্দার অন্তরালে। যে কারণে মাদকের আগ্রাসন থামছে না। বরং নিত্যনতুন পন্থায় চলছে মাদকের কেনাবেচা। শেরপুরে এখন নারীরাও জড়িয়ে পড়ছেন সর্বনাশা ইয়াবা, হোরোইন, ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যবসায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাভের আশায়, বন্ধুদের প্ররোচনায় নেশার ট্যাবলেট ইয়াবা হাতে তুলে নিচ্ছেন তরুণ সমাজের অনেকেই। আর নেপথ্যে থাকা গডফাদারের কল্যাণে শেরপুর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা-হেরোইনের মতো মাদকের সর্বনাশা নেশা। মূল মাদক ব্যবসায়ীরা শেরপুর জেলা ও জেলা শহরের বাইরে নিজেদের নেপথ্যে রেখে যুবতী, তরুণী এমনকি বয়স্ক মহিলাদের ব্যবহার করছে ইয়াবা-হেরোইন বিক্রির কাজে। সম্প্রতি পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে বেশ কয়েকজন নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিষয়টি নতুন ভাবনায় ফেলেছে।

পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জোসনা বেগম, পারভীন আক্তার ও রুমা আক্তার নামে তিন মহিলা ইয়াবাসহ এবং রীনা আক্তার নামে আরেক মহিলা হেরোইনসহ গ্রেফতার হন। শেরপুর-জামালপুর সড়কের পোড়ার দোকান এলাকা থেকে পুলিশ বেশ কিছুদিন আগে জোসনা বেগম নামে এক মহিলাকে ৪০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। জোসনা নিজেও ইয়াবায় আসক্ত। জোসনা গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশকে বেশ কিছু নাম জানান যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গডফাদারদের নাম না জানলেও যারা ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের অনেকের সঙ্গেই জোসনার ওঠাবসা আছে বলে পুলিশ জানায়।

অন্যদিকে, র‌্যাব শেরপুর পৌর শহরের চকপাঠক এলাকা থেকে পারভীন আক্তার নামে আরেক নারীকে ৮০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। পারভীন ওই এলাকার নাজির হোসেনের স্ত্রী এবং এলাকায় ‘বিলকিসের মা’ নামে পরিচিত। গত ১ মার্চ দুপুরে এই নারীকে র‌্যাব আটক করার আগ পর্যন্ত এলাকার লোকজন জানতেনইনা তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) শহরের মীরগঞ্জ এলাকা থেকে পারভীন ওরফে রুমা আক্তার নামে আরেক নারীকে গ্রেফতার করে ইয়াবাসহ মাদক বিক্রির অভিযোগে।

গত ৩ মে রোববার দুপুরে সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের ১৫ গ্রাম হেরোইনসহ রিনা আক্তার (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। এসময় ওই মহিলার সহযোগী আনিসুর রহমান (৪০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী পালিয়ে যান।

এদিকে, শ্রীবরদী থানা পুলিশ গত ৫ মে রাতে সীমান্তবর্তী রানিশিমুল ইউনিয়নের খাড়ামোড়া গ্রাম থেকে ৩ বোতল ভারতীয় মদসহ উর্সিলা ওরফে মিনা খাতুন (৪০) নামে এক নারীকে আটক করেছে। তিনি খাড়ামোড়া গ্রামের মতিন সরকারের স্ত্রী বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, শহরের সত্যবতী সিনেমা হলের সামনে থেকে মাধবপুর ভূমি অফিস পর্যন্ত ‘টিটি’ নামে পরিচিত একটি চক্র নেশার ইঞ্জেকশন বিক্রি করতেন। ওই চক্রের সঙ্গে কাজ করতেন ওই তিন যুবতী। এই চক্রটি এখন নেশার ইঞ্জেকশন বাদ দিয়ে ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত হয়েছেন।

শেরপুর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ডিবি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চেষ্টা করছে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য। ইতোমধ্যে পুলিশ, ডিবি, র‌্যাবের অভিযানে বেশ কয়েকজন মাদকসেবি ও মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তিনি জানান, নারীদের ইয়াবা, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ার বিষয়টি আমাদের নতুন ভাবনায় ফেলেছে। নারীদের স্পর্শকাতর স্থানে মাদক লুকিয়ে রাখা অনেক সহজ। যে কারণে অনেক সময় অভিযানকালে মহিলা পুলিশ না থাকায় নারীদের শরীর তল্লাশি নিয়ে বিব্রবতকর অবস্থায় পড়তে হয় আমাদের। আর এ সুযোগ গ্রহণ করেই মাদকের গডফাদাররা মাদক ব্যবসার ক্ষেত্রে খুচরা ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা হিসেবে নারীদের ব্যবহার করছেন। তাছাড়া অনেক নারীই সহজলভ্য উপার্জন হিসেবে মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes

Share