Home / জাতীয় / রাজনীতি / হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কম্প্রোমাইজ!
hafagat amolig

হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কম্প্রোমাইজ!

সরকার কওমি মাদরাসার উচ্চশিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা তো হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি।

বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, জনগণের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারে তারাই এদেশের সত্যিকারের প্রগতিশীল। বাস্তবতা থেকে প্রগতি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আমরা তো হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি। আমাদের আদর্শিক কোনো বিষয়ে সামঞ্জস্যতার আলোচনা করতে যাইনি।

তিনি বলেন, ৭০ হাজার কওমি মাদরাসার ১৪ লাখ ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশে আছে। এটা একটা বাস্তবতা। এটাকে আমরা ইগনোর করতে পারি না, সরকারি স্বীকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারি না।

তিনি বলেন, সেটা অবশ্যই বাস্তবতা বিরোধী হবে। একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখানে পড়াশোনা করে। তাদের ভবিষ্যৎকে সরকার অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে না। তাদের শিক্ষার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

সেতুমন্ত্রী বলেন, এখানে কোনো ধর্মীয় রাজনীতি অথবা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোস, এটা হাস্যকর। আওয়ামী লীগ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করবে বা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করবে-এটা যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তাদের অভিযোগ। এটা বেগম জিয়ার অভিযোগ। এদেশে ধর্মের নামে তারা কত অর্ধমের কাজ করেছে। উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির উসকানিদাতা কারা? এই শক্তির পৃষ্ঠপোষক কারা? সারা দুনিয়া জানে এটা।

তিনি বলেন, হেফাজত মূল বিষয় নয়, আমাদের মূল বিষয় কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি। এখানে হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো অ্যালায়েন্স হয়নি। তাদের (হেফাজত) চিন্তা-ধারার সঙ্গে আমাদের চিন্তা-ধারার একটা মিলমিশ হয়ে গেছে এ ধরনের ধারণা কোথা থেকে এলো?

কাদের বলেন, মোগল আমল থেকে পহেলা বৈশাখ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে ধর্মের কন্ট্রাডিকশন আছ, এটা যারা বলে তারা সত্য কথা বলে না। ধর্মের জায়গাকে আমরা আধুনিক করতে চাই, মূল জায়গায় ফিরিয়ে আনতে চাই। ইসলাম আধুনিকতাকে এক্সপেক্ট করে। ধর্মীয় শিক্ষাকে আধুনিকায়নের দিকে যেতে হবে, এটা বাস্তবতা।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য গতানুগতিক মিথ্যাচার, অন্তঃসারশূন্য ও অজ্ঞাত তথ্যে ভরপুর। তার বক্তব্যে কোনো সারমর্ম ছিলো না। তিনি কিছু চটকদার বায়বীয়, বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেছেন। যা তার কাছে প্রত্যাশিত ছিলো না।

তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, ভারতের সাথে যে ধরনের এমওইউ ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ঠিক একই ধরনের চুক্তি ও এমওইউ পৃথিবীর অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সাথেও কার্যকর রয়েছে। আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, অন্য কোনো বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদনের আগে ও পরে এতো আলোচনা, বক্তব্য, বিবৃতি কোনো রাজনৈতিক মহল থেকে কোনোদিন উচ্চারিত হয়নি।

কাদের বলেন, আমি বেগম জিয়াকে প্রশ্ন করতে চাই, একমাত্র ভারতের সঙ্গেই সমঝোতা স্মারক হলেই প্রশ্ন উঠবে কেন? ভারত আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতম বন্ধুপ্রতিম দেশ। যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সহযোগিতা করেছে এবং আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সে দেশের অনেক সৈন্য তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন।

তিনি বলেন, সব রাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে তাদের সাথে ইতোপূর্বে অনুরূপ চুক্তি সম্পাদনের সময় এ ধরনের প্রশ্ন উঠেনি কেন? ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘বাংলাদেশ চায়না ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট’শীর্ষক একটি চুক্তি করেছিলেন। সে চুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা কি হয়েছিল? আমরা খালেদা জিয়ার কাছে তার জবাব চাই। আমরা ভারতের সাথে অনুরূপ চুক্তি করেছি।

আওয়ামী লীগ সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিএনপির চেয়ারপারসনের এ মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, হাস্যকর। তিনি যা চর্চা করেন, তাই আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টা আমি জানি না। আমাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একটা শোভাযাত্রা বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পর্যন্ত। আমরা চিন্তা করেছি এ ধরনের শোভাযাত্রায় জনগণের ভোগান্তি হয়। বহুদিন ধরে কোনো ধরনের র্যা লি করার পক্ষে আমরা নই। আমাদের নেত্রীর সংবর্ধনার বড় ধরনের আয়োজন ছিল। নেত্রী জানিয়েছেন জনগণের ভোগান্তি দিয়ে আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। একই কারণে আমরা শোভাযাত্রা বাতিল করেছি। আমরা গণভবনে নেত্রীর সঙ্গে বৈশাখী উৎসব পালন করবো। সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাইরে মানুষের যেন ভোগান্তি না হয়।

কুমিল্লাসহ সারা দেশে দলের শৃঙ্খলাবিরোধীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে কেস-টু-কেস ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, একে এম এনামুল হক শামীম, আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, হাছান মাহমুদ, আব্দুস সবুর, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, আফজাল হোসেন, শামসুন্নাহার চাপা, দেলোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন, উপাধ্যক্ষ রেমণ্ড আরেং প্রমুখ। (সূত্র-জাগোনিউজ২৪.কম)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়০৩:০০ পি.এম, ১৩ এপ্রিল ২০১৭,বৃহস্পতিবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Leave a Reply