আমরা আদিবাসি, তেমন কোন কাজ জানিনা। তাই কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিস হকারি (বিক্রি) করি। এতে তেমন কোন আয় নেই। যা বেচা বিক্রি হয় তা থেকে কোন রকমে ছোট ভাইকে কলেজে পড়ালেখা করাচ্ছি। আর এসব বিক্রি করেই আমার ছোট ভাইকে কলেজে পড়িয়ে মানুষ করার স্বপ্ন।
বড় অসহায়ের মতো স্পর্ট ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন,আদিবাসি কুটির শিল্প বিক্রেতা হৃদয় কুমার ভেদ। পিতা শ্রী রোগুনাথ ভেদ। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলায় খন্দবাড়ি গ্রামে তার বাড়ি। উঠতি বয়স থেকেই কুটির শিল্পের বিভিন্ন রকমের জিনিস বিক্রি করার কাজ বেছে নেন।
প্রায়ই চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে কুটির শিল্পের তৈরি নানার রকমের রঙ্গিন জিনিস কাঁধে দেখা মিলে তার। সম্প্রতি কথা হয় হৃদয় কুমার নাথের সাথে।
সে জানায়, ছয়, সাত বছর বয়স থেকেই সে এসব বিক্রি শুরু করেন। কারন তার বাপ, চাচা এবং পূর্ব পুরুষরা ও একই কাজ করে চলেছেন। তারা আদিবাসি হওয়ায় অন্যকোন কাজ জানা নেই। তাই বাঁশ কিনে সেগুলো বেতি করে রোদে শুকানোর পর, লাল সবুজ, নীল, হলুদ রং দিয়ে তারপর কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন।
এরমধ্যে রয়েছে,সবজির জুড়ি, ফলের জুড়ি, ছোট খেলনা কুলা,বাচ্চাদের খেলনাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করে থাকেন। আর সেগুলো নিয়ে বিক্রির জন্য বিভিন্ন জেলায় বেরিয়ে পড়েন হৃদয় কুমার।
সে জানায়, তার বাবা, মা, স্ত্রী সহ পরিবারের সবাই মিলে এসব তৈরি করেন। আর সেগুলো নিয়ে সে কুষ্টিয়া থেকে কুমিল্লা, নোয়াখালি, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, ব্রাক্ষ্মন বাড়িয়া এবং চাঁদপুর সহ বিভিন্ন জেলার গ্রাম, গঞ্জে হেটে হেটে বিক্রি করে থাকেন। সে চাঁদপুরে আছেন, প্রায় ৬/৭ বছর ধরে। এরভেতর মাঝে মধ্যে নিজ জেলায় গিয়ে নতুন কুটির শিল্পের মালা মাল নিয়ে আবার হকারিতে বিভিন্ন জেলা শহরে বেরিয়ে পড়েন।
হৃদয় কুমার জানান, এসব কুটির শিল্প বিক্রি করে তার তেমন কোন আয় নেই। প্রতিদিন কোন বেচা বিক্রি হয়নি। মাঝে মধ্যে কখনো ২ হাজার কখনো ৩ হাজার টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। গড়ে হিসেব করলে দেখাযায়, বাঁশ এবং রং ক্রয় করে যে অর্থ ব্যয় হয় এবং দিনে রাতে পরিশ্রম শেষে যেসব কুটির শিল্প তৈরি করেন। তাতে তার তেমন কোন আয় হয়নি বললেই চলে। তবুও যতটুকু বিক্রি এবং আয় হয় তা দিয়ে ছোট ভাই অবুজ কুমার ভেদ কে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে পড়ালেখার খরচ ব্যয় করেন।
হৃদয় কুমার আরো জানান, আমার বাবা, মা এবং স্ত্রীও বাড়িতে এসব কুটির শিল্প তৈরি করেন। এটা ছাড়া আমাদের সংসার চালানোর মতো কোন সামথ্য নেই। আমি যা বিক্রি করি তা দিয়ে ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচেই ব্যয় হয়। প্রতিমাসে কিস্তি নিয়ে আমাদের কোন রকম সংসার চলে। আমরা আদিবাসি হওয়ায় অন্যকোন কাজ না জানাতে এই কুটির শিল্প বিক্রি করছি। আর এসব বিক্রি করেই আমার ছোট ভাইকে কলেজে পড়িয়ে মানুষ করার স্বপ্ন।
প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি